নাইন ইলেভেনের সময়টাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মুসলিম বিদ্বেষ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ এক মুসলিম নারীর হিজাব জোর করে খুলে ফেলার ঘটনায় মামলা করছেন কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) নেতারা।
মিশিগানের ডেট্রয়েটে পুলিশ এক মুসলিম নারীকে সম্প্রতি গ্রেফতারের পর জোর করে তার হিজাব খুলে ফেলেন। খবর আরব নিউজের।
সিএআইআরের আইনজীবী অ্যামি দৌকুরে জানান, মুসলিম নারীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করছি।
হেলেনা বোয়ে নামে ওই নারী বাদী হয়ে মামলাটি করবেন বলেও আইজীবী জানিয়েছেন।
তিনি জানান, হেলেনা তার গাড়ি চালিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে লাইসেন্সের মেয়াদ পরীক্ষা করার সময় পুলিশ তার সঙ্গে ওই বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী আচরণ করে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বিমানে হিজাব পরিধান করায় এক মুসলিম নারীর ওপর বর্ণবাদী হামলা হয় বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন স্থানীয় আদালত।
মুসলিমবিদ্বেষী হামলার শিকার আয়শা তৌরি নামে ওই নারী মিশিগান স্টেট ইউভার্সিটির গবেষক দলের সহকারী। টুইন টাওয়ারে হামলার দিন অর্থাৎ গত ১১ সেপ্টেম্বর আটলান্টা থেকে স্পিরিট এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে করে মিশিগান আসছিলেন।
এ সময় শ্বেতাঙ্গ এক নারী তার হিজাব দেখে মুসলিম সন্ত্রাসী বলে চিৎকার করতে করতে তার মুখে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন এবং বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী গালাগাল দিতে থাকেন।
এ ঘটনা বিমানের যাত্রীরা ভিডিও করে সামাজিত যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে মানবাধিকারকর্মীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়েন কাউন্ট্রি আদালতের নজরে এলে বর্ণবাদী এ হামলার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্পিরিট এয়ারলাইন্সের কর্মীরাও শ্বেতাঙ্গ ওই যাত্রীর বর্বর আচরণে বিব্রত বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই যাত্রীকে পরে আর তারা তাদের বিমানে ভ্রমণের সুযোগ দেবেন না।
গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে হিজাব পরার ‘অপরাধে’ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এক মুসলিম তরুণীকে। ভার্জিনিয়ার এক দাঁতের ক্লিনিকে সহকারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন নজাফ খান নামে ওই তরুণী।
প্রথম দু’দিন সব ঠিকই ছিল। সবাই তার কাজের অনেক প্রসংশাও করেন। তৃতীয় দিন মাথায় হিজাব পরে কাজে আসার পরেই ঝামেলার সূত্রপাত।
তরুণীর অভিযোগ, তাকে হিজাব খুলে রাখার নির্দেশ দেন ওই ক্লিনিকের মালিক চাক জো। কিন্তু তরুণী তা না মানলে তাকে সেই মুহূর্তেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার এক ইসলামিক সংগঠন জানায়, ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা সে দেশের আইনবিরুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেইট ক্রাইম বা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ হয়েছে ২০২০ সালে। এই অপরাধের শিকার হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। জাতিগত, জেন্ডার, ধর্মবিশ্বাসের পার্থক্যসহ বিভিন্ন কারণে দেশটিতে এ ধরনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশেষভাবে এশীয় বংশোদ্ভূত ও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ওপর বিদ্বেষপ্রসূত হামলা বেশি ছিল। জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ ঊর্ধ্বমুখী।
২০২০ সালে এফবিআই এ ধরনের সাত হাজার সাতশ’র বেশি অপরাধ নথিভুক্ত করেছে। ওই বছর এ ধরনের সাত হাজার ৭৮৩টি অভিযোগ পেয়েছিল সংস্থাটি। ২০০৮ সালের পর এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সূত্র মতে, ছয় হাজার চারশ’র বেশি হামলাকারীর ৫৫ শতাংশই শ্বেতাঙ্গ।
যদিও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো হেইট ক্রাইমের তথ্য এফবিআইকে জমা দিতে বাধ্য নয়, তাই এ ধরনের অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ