আফগানিস্তানে খাদ্য সংকটে দিনাতিপাত করছে বেশিরভাগ পরিবার। আগের থেকে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থাকলেও দেশটি তালিবানের দখলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে চরম অস্থিতিশীলতার দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকে সেখানে খাদ্যের অভাব বিস্তৃত হতে শুরু করে।
২১ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের সব কটিতে টেলিফোনে নেওয়া জরিপে দেখা গেছে ৯৩ শতাংশ পরিবারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য নেই।
১৫ই আগস্ট তালিবান জঙ্গিরা আফগানিস্তান দখল করার আগে থেকেই সেখানে ব্যাপক খাদ্য সংকট ছিল। ১৭ই জুন টেলিফোনে করা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরিপে দেখা গেছে ৮১% পরিবার খাদ্য সংকটের মধ্যে ছিল। ১৫ই আগস্ট আফগান সরকারের পতন এবং তালিবানের কাবুল দখলের পর জরিপে দেখা গেছে এই পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে ৯৩% এ দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উপ-আঞ্চলিক পরিচালক অ্যানথিয়া ওয়েব বলছেন, ‘বহু পরিবারই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এবং বেঁচে থাকার জন্য নেতিবাচক কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
ওয়েব বলছেন, ‘এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে এক বেলা অভুক্ত থাকা, বড়দের খাবার না দিয়ে শিশুদের খাবার দেওয়া কিংবা খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনা। সুতরাং এখন চারটি আফগান পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার সবগুলো না হলেও অন্তত একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
ওয়েব আরও বলেন, ‘নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রতি মাসে আমাদের ৯০ লক্ষ লোকের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে, যদি আমরা বছরের শেষ নাগাদ ১ কোটি ৪০ লক্ষ লোককে খাদ্য পৌঁছে দেবার লক্ষ্য ঠিক রাখতে চাই। আমরা ২০ কোটি ডলারের জন্য আবেদন করেছি এবং বেশ কিছু দেশ সাহায্যের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তবে অক্টোবর মাস নাগাদ খাদ্য মওজুদ শেষ হওয়া পরিহার করার জন্য আমরা আক্ষরিক অর্থেই ভিক্ষা চাইছি।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানাচ্ছে, ১ কোটি ৪০ লাখ লোক ক্ষুধার্ত। যাদের মধ্যে ২০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং জীবন রক্ষার জন্য তাদের বিশেষ পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। লোকজন বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের খাদ্য কেনারও পয়সা নেই।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এ বছর ৪০ লক্ষ আফগান নাগরিককে সাহায্য করতে পেরেছে। ওয়েব বলেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বেশি দেরি হবার আগেই খাদ্য কিনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে খাদ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারবে।
এদিকে, দেশটিতে খাদ্যের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। খাদ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ রয়েছে বলে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়ক রামিজ আলাকবারভ জানিয়েছেন। সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাননি বলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভঙ্গুর আফগান অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে তালেবানের কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন এবং নারী-শিশু অধিকার দেয়ার বিকল্পও নেই। এরই মধ্যে তালেবান জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/০৯০৩
আপনার মতামত জানানঃ