ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে বহু বছর আগেই। তবে এই ডাইনোসর নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই। নানা তথ্যও মিলছে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা বহু আগে বিলুপ্ত এই প্রাণীটিকে নিয়ে।
এবার বিজ্ঞানীরা জানতে পারলো, পাখির মতো উড়ে বেড়াত অতিকায় ডাইনোসর। একে বলা হতো ‘উড়ুক্কু ড্রাগন’। চিলির আতাকামা মরুভূমিতে বিজ্ঞানীরা সেই উড়ুক্কু ড্রাগনের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন।
জীবাশ্মটি প্রথম মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছিল ২০০৯ সালে; বর্তমান আতাকামা মরুভূমি থেকে। উড়ন্ত সরীসৃপটি ডাইনোসরের টেরোসর গোত্রের মধ্যে পড়ে। জীবাশ্মটি ১৬ কোটি বছর আগের কোনো ডাইনোসরের।
এত দিন ধারণা করা হতো, জুরাসিক যুগের এই ডাইনোসর কেবল উত্তর গোলার্ধে বিচরণ করত। দক্ষিণ গোলার্ধে উড়ুক্কু ড্রাগনের অস্তিত্বের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে অ্যাকটা প্যালিওন্টোলজিকা পোলোনিকা সাময়িকীতে।
উড়ন্ত এ সরীসৃপ আদিম পেরোসরদের একটি গ্রুপের অন্তর্গত ছিল, যারা ১৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করত। এটির ছিল দীর্ঘ লেজ, ডানা এবং বাইরের দিকে তীক্ষ্ণ দাঁত।
এই ডাইনোসরের জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন আতাকামা ডেজার্ট মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি অ্যান্ড কালচারের পরিচালক ওসভালদো রোজাস। এরপর চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ নিয়ে গবেষণা চালান।
প্রায় এক যুগ গবেষণার পর জীবাশ্মটি র্যাম্ফোরিনকাইন টেরোসর বলে নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শনের জন্য সুপরিচিত দক্ষিণ গোলার্ধ্বের গন্ডোয়ানায় এটি এ ধরনের প্রথম কোনো জীবের দেহাবশেষ।
ইউনিভার্সিটি অফ চিলির গবেষক জোনাটান অ্যালারকন জানান, প্রাণীটির ডানা লম্বায় প্রায় দুই মিটার। এর একটি লম্বা লেজ ও তীক্ষ্ণ নাক ছিল।
তিনি বলেন, ‘এযাবৎকালে সমগোত্রীয় যত প্রাণীর সন্ধান মিলেছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত এটি।’
চিলিতেও সবচেয়ে প্রাচীন টেরোসরের জীবাশ্ম এটি। এর আগে উত্তর গোলার্ধ্বে এ ধরনের ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল।
‘উড়ুক্কু ড্রাগন’ নিয়ে গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জোনাথন অ্যালার্কন বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত উড়ুক্কু ড্রাগনের বিচরণ নিয়ে যা জানা ছিল, প্রকৃতপক্ষে তাদের বিস্তৃতি ছিল আরও বেশি।’
এই আবিষ্কার থেকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের প্রাণীদের সম্ভাব্য স্থানান্তর ও সম্পর্কের সূত্রের দিকে ইঙ্গিত মেলে। এ ছাড়া এটি এমন একটি সময়ের ইঙ্গিত দেয়, যখন পৃথিবীর অধিকাংশ দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূমি গন্ডোয়ানা নামক একটি মহাদেশে সংযুক্ত ছিল।
বিজ্ঞানী অ্যালার্কন বলেন, এসব পেরোসরের একটি গ্রুপের খোঁজ কিউবায়ও পাওয়া যায়। এগুলো দৃশ্যত উপকূলীয় প্রাণী ছিল। তাই তারা সম্ভবত উত্তর ও দক্ষিণে জায়গা বদল করে অথবা তারা এখানে একবার এসে আর ফেরত যায়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
চিলির বিশাল আতাকামা মরুভূমি একসময় প্রশান্ত মহাসাগরে নিচে ডুবে ছিল। এ অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় কয়েক দশক ধরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। জীবাশ্ম অনুসন্ধানকারীদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা। মরুভূমির অনেক জায়গায় এখনো স্পর্শ পড়েনি। মরুভূমি পৃষ্ঠের নিচেই রয়েছে অনেক জীবাশ্ম।
এর আগে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের নতুন একটি প্রজাতি তালিকাভুক্ত করেছেন। ২০০৭ সালে কুইন্সল্যান্ডে একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন তারা।
দীর্ঘ গবেষণার পর তারা বলছেন, এই মহাদেশে খোঁজ পাওয়া বৃহত্তম ডাইনোসর প্রজাতিগুলোর একটি ছিল এই ডাইনোসর।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাইনোসরের নতুন প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে অস্ট্রালোটাইটান কুপারেনসিস বা দ্য সাউদার্ন টাইটান।
গবেষকেরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় খোঁজ পাওয়া এই ডাইনোসর বিশ্বজুড়ে খোঁজ পাওয়া বৃহত্তম ১৫ ডাইনোসরের একটি। এর আকার একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান। অর্থাৎ এর উচ্চতা সাড়ে ছয় মিটার (প্রায় ২১ ফুট) ও দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার (প্রায় ৯৮ ফুট) হতে পারে।
কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম এই প্রজাতির কঙ্কাল পাওয়া যায়। প্যালেওন্টোলজিস্টরা গত দশক থেকে ডাইনোসরের প্রজাতি শনাক্ত করতে কাজ করছেন। তারা অন্যান্য জানা প্রজাতির সাওরোপডসের সঙ্গে হাড়ের স্ক্যান করে তা তুলনা করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩২৪
আপনার মতামত জানানঃ