গতকাল বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের মুসলিমদের নিয়ে তালিবানের কথা বলার অধিকার রয়েছে বলে উগ্র ইসলামিক গোষ্ঠিটির এক মুখপাত্র দাবি করার পরেই নড়েচড়ে বসেছে জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন। কাশ্মীরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে তালিবানের যোগসাজশ প্রতিহত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তালিবান তথা আফগানিস্তানের ব্যাপারে কোনও কিছু লেখা চলবে না। যদিও তালিবানের এমন বক্তব্য সামনে আসার আগে থেকেই অবশ্য জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছিল।
১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি যখন দেশ ছাড়েন, কাশ্মীরের সংবাদপত্রগুলো সেই খবর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছিল। পরের দিনই তথ্য কর্মকর্তার দফতর থেকে পত্রিকার সম্পাদকদের ডেকে বলে দেওয়া হয়, তালিবান কিংবা আফগানিস্তান প্রসঙ্গে কোনও খবর যদি তারা প্রকাশ করেন, তা হলে সরকারি বিজ্ঞাপন মিলবে না।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি উর্দু পত্রিকার সম্পাদক বলেন, ”তথ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আফগানিস্তান নিয়ে কোনও কিছু লেখা চলবে না।” লিখলে সরকারি বিজ্ঞাপন মিলবে না বলে কাশ্মীরের পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গতকাল কাশ্মীর নিয়ে তালিবানের বক্তব্য উপত্যকার কোনও কাগজে প্রকাশিত হয়নি। হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির মৃত্যুর খবরও কাশ্মীরের কাগজগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়নি।
সম্পাদকেরা জানাচ্ছেন, জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার মিডিয়া উপদেষ্টা এ নিয়ে বড় খবর না করার জন্যই তাদের বলেছিলেন।
পাশাপাশি, কাশ্মীরের খবর করার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমন, এনকাউন্টারের প্রসঙ্গ এলে পুলিশের বক্তব্যই প্রকাশ করছে সংবাদপত্রগুলো। সে সবের সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলো জুড়ে যায়, তা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয় না।
কাশ্মীরের বাস্তব পরিস্থিতি
সম্প্রতি কাশ্মীরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা বাহিনীর লেফটন্যান্ট জেনারেল ডি পি পাণ্ডে। ১৫ কর্প বা কাশ্মীরের বিশেষ বাহিনী চিনার কর্পের কম্যান্ডিং অফিসার তিনি। স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাণ্ডে বলেছেন, আফগানিস্তান তালিবানের হাতে চলে যাওয়ার ফলে কাশ্মীরে তার প্রভাব পড়বে না। কাশ্মীরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছে সেনা।
তবে সেনা অফিসার যাই বলুন, সেনা সূত্রই বলছে, গত কয়েক মাসে কাশ্মীরে উত্তেজনা অনেক বেড়েছে। ভারতীয় সেনা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে সংবাদ মাধ্যম ডিডাব্লিউকে জানান, ”অন্তত ছয়টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে। তারা ক্রমাগত নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।”
সূত্র মতে, ৫০ থেকে ৬০ জন ‘সন্ত্রাসী’ নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। সেনাকে বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত রাখছে তারা। কেন ব্যস্ত রাখছে? এ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, এই সুযোগে সীমান্তে একাধিক লঞ্চপ্যাডে পুনরায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। গত কয়েকবছরে ওইরকম একাধিক লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করেছিল ভারতীয় সেনা।
আরো দুইটি বিষয় নিয়ে সংশয়ে আছে সেনা। গত কয়েকমাসে ৫০ থেকে ৬০ জন কাশ্মীরী যুবক বেপাত্তা হয়েছে। তাদের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, কাজের জন্য বাইরে যাচ্ছে বলে বাড়ি ছেড়েছে ওই যুবকরা। কিন্তু কোনো যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে যায়নি। গত কয়েক বছরে ঘরছাড়ার সংখ্যা কাশ্মীরে অনেকটাই কমেছিল; এবছর ফের তা বাড়ছে।
এছাড়া পাকিস্তানের কাশ্মীরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তালিবানের সঙ্গে কাজ করে আসা যোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, এমন ছবি আছে। ভারতীয় কাশ্মীরেও তা নিয়ে যথেষ্ট আলোড়ন হয়েছে বলে সেনার কাছে খবর আছে। সূত্র মতে, ভারতীয় কাশ্মীরেও তালিবানের আফগান দখল নিয়ে উৎসব হয়েছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১১১৭
আপনার মতামত জানানঃ