করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউটি এখন অব্দি সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিলো বাংলাদেশের জন্য। এতে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মূখীন হয় দরিদ্র মানুষেরা।
এক জরিপের তথ্য মতে, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকের আয়ের পরিমাণ ১১ শতাংশ কমে গেছে ৬৭ শতাংশ শ্রমিকের।
পরিবারকে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বিকল্প পন্থা হিসেবে ঋণ নিতে হয়েছিল, সেটি প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বেশি। এই ঋণ পরিশোধ করতে তাদের গড়পড়তা প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২০২১ সালের ২০২১ মার্চে পর্যন্ত করা এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের আসন্ন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এই খাতের জন্য কী কী পরিবর্তন আনবে সে বিষয়গুলোও এই সংলাপে আলোচিত হয়।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পংকজ কুমার, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি এবং মালেক স্পিনিং মিলের এমডি এ মতিন চৌধুরী, বিজিএমইএর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের এমডি রুবানা হক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শ্রমিকদের পরিশ্রমেই বাংলাদেশের অর্থনীতি চলছে কিন্তু প্রয়োজনের সময় তারাই আর্থিক সুরক্ষা পেল না। শ্রমিকদের সামাজিক অধিকার, ভবিষ্যৎ সুরক্ষার নিশ্চয়তা, আয়বহির্ভূত সুবিধা এবং বিশেষ করে নারীদের শ্রমশক্তিতে আরো কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, মহামারির ফলে শ্রমিকরা নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য পড়েছেন। যে কারণে রাষ্ট্র, গার্মেন্ট শ্রমিক, উদ্যোক্তা, গবেষক ও নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য বীমাসংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
মতিন চৌধুরী বলেন, আগামী কয়েক বছরে পোশাক রফতানি বাজারে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ আছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে আলোচনায় রুবানা হক বলেন, শ্রমিকদের আসন্ন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং নতুন ধরনের শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তাসলিমা আখতার মনে করেন, শ্রম আইন অনুযায়ী এখন মজুরি মূল্যায়নের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ শ্রমিকরা সর্বক্ষণ এ নিয়ে হুমকির মুখে থাকেন।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যেহেতু পণ্য রফতানি করছি, উৎপাদনশীলতা কমে গেলে এর অভিঘাত শ্রমিকদের ওপরই বেশি পড়বে।
সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর পংকজ কুমার। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং উন্নয়নকর্মী এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও মন্তব্য তুলে ধরেন। এছাড়াও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯০৭
আপনার মতামত জানানঃ