একজন মুসলিম হয়ে দোকানের নাম রেখেছিলেন হিন্দু দেবতার নামে৷ হিন্দু দেবতার নামে কেন তিনি নিজের দোকানের নামকরণ করেছেন— এ প্রশ্ন তুলে কয়েকজন ব্যক্তি চড়াও হন তার দোকানে। হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার দোকান ভাংচুরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ভিডিও নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই মামলা দায়ের করে পুলিশ। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।
ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের মথুরায়৷ হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয়স্থানে এক মুসলিম ব্যবসায়ী ধোসার স্টল খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন৷ ধর্মীয় স্থান হওয়ায় দোকানের নাম রেখেছিলেন ‘শ্রীনাথ ধোসা সেন্টার’৷ এই নাম পছন্দ হয়নি একদল গোঁড়া হিন্দুদের৷ অভিযোগ, নিজেদের কৃষ্ণভক্ত বলে দাবি করা ওই হিন্দুরা মুসলিম যুবককে গিয়ে শাসিয়ে আসে৷ তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন মুসলিম হয়েও সে দোকানের নাম হিন্দু দেবতার নামে রেখেছে? এর পরই দোকানে টাঙানো বোর্ড টেনে নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা৷
সেই ফুটেজও ভাইরাল হয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়৷ তাতে দেখা গেছে, একদল কৃষ্ণভক্ত মথুরায় শুদ্ধিকরণের ডাক দিয়েছে৷ ভিডিওতে তাদের বলতে শোনা গেছে, দোকানের নাম দেখে ভুল বুঝে হিন্দুরা এখানে ধোসা খেতে চলে আসবে৷ এতে ভক্তদের শুদ্ধতা নষ্ট হবে৷ তাছাড়া মুসলিম হয়েও কোন স্পর্ধায় সে দোকানের নাম হিন্দু দেবতার নামে রাখতে গেল? মুসলিম নাম রাখতে অসুবিধা কী ছিল? নিজেদের ‘কৃষ্ণভক্ত’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে তাদের মুখে মথুরাকে ‘শোধন’ করার কথাও বলতে শোনা গিয়েছে ওই ভিডিয়োয়।
জানা গেছে, গত ১৮ অগস্ট কোতয়ালি পুলিশ থানা এলাকার বিকাশ বাজারের ঘটনা৷ ওখানে ধোসা বিক্রি করেন ইরফান নামে এক মুসলিম যুবক৷ গত শনিবার অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৭ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনা নিয়ে সেখানকার পুলিশ সুপার মার্তণ্ডপ্রকাশ সিংহ বলেছেন, আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কোতোয়ালি ইন্সপেক্টর সূর্যপ্রকাশ শর্মা জানিয়েছেন, মূল অভিযুক্ত শ্রীকান্ত চকবাজার এলাকার বাসিন্দা। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে জেরার মুখে নিজের অপরাধ স্বীকারও করেছে। তবে অভিযুক্তরা কেউই কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশিষ্টরা বলছেন, মুসলিম যুবকের ব্যবসা করার জন্য নাম আড়াল করা থেকে অনুধাবন করা যায় বিজেপি শাসিত দেশটিতে মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহতা কতটা, কতটা আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘু মুসলিমরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ