কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুককে স্বাভাবিক বদলি দেখিয়ে প্রত্যাহার করে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ধর্ষণচেষ্টা মামলাটি তুলে না নেওয়ায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরী, ও তার মা-বাবাকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে ধরে এনে সড়কে ফেলে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে নির্যাতন করে আসামিরা। এ দুইটি ঘটনারই তদন্ত করছিলেন এসআই ওমর ফারুক।
এসআই ওমর ফারুক মামলা তদন্তের কথা বলে ঘুষ নিয়েছেন— ভুক্তভোগী কিশোরীর মায়ের এমন অভিযোগের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে তাকে ‘স্বাভাবিক বদলি’ দেখিয়ে প্রত্যাহার করে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়েছে।
ভিডিওতে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এভাবে বারবার মারধর করেছে (আসামিরা)। আমি বারবার বলেছি, আমাদের জানের নিরাপত্তা নাই। আসামি ধরেন না হয় মামলা রেফার্ড করেন। সে (এসআই ওমর ফারুক) কোনোটাই করে না। আসলেই বলে আমাদের টাকা লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনবার আসছে তিনবারই উনাকে (তদন্ত কর্মকর্তা) টাকা দিছি। একবার চার হাজার, একবার তিন হাজার, আরেকবার আড়াই হাজার টাকা দিয়েছি।’
গত ২০ আগস্ট দেবিদ্বারের কুরছাপ গ্রামে ধর্ষণচেষ্টার মামলা তুলে নিতে অভিযুক্ত হাসান ও তার বড় ভাই কাউছার আহম্মেদসহ অন্য আসামিরা ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার মা-বাবাকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেন। লাঠিপেটা সময় ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নির্যাতনের ঘটনায় ২৬ আগস্ট রাতে দেবিদ্বার থানায় হাসান, তার বড় ভাই কাউছার, তাদের বাবা নুরুল ইসলাম ও মোস্তাফা কামালসহ আট জনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা।
মামলা তদন্ত করছিলেন এসআই ওমর ফারুক। গত শুক্রবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় র্যাব-পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনার মূল আসামি কাউছার ও হাসানকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এর আগে ২৪ মে কুরছাপ গ্রামের কিশোরীকে তারই চাচাতো ভাই হাসানের ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত করছিলেন এসআই ওমর ফারুক।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মা জেসমিন আক্তারের অভিযোগ, ওই মামলার তদন্তের কাজে এমআই ওমর ফারুক তিনবার বাড়িতে এলে প্রতিবারই তিনি টাকা নেন। এরপর আরও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার (৩০ আগস্ট) দেবিদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া থানার সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমির উল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “কিশোরী ধর্ষণচেষ্টা মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই ওমর ফারুককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়নি, এটা স্বাভাবিক বদলি। জেলা পুলিশ সুপারের মৌখিক নির্দেশে তাকে পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়।”
তবে শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে তাৎক্ষণিক বদলির বিষয়ে একটি চিঠি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হতে দেবিদ্বার থানায় আসে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যাহার হওয়া এসআই ওমর ফারুক নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যত গবেষণা বা জরিপ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে পুলিশ সব সময় দুর্নীতিতে শীর্ষ পর্যায়ে আছে৷ এছাড়া মানুষকে হয়রানি করে, পকেটে মাদক- অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ঘুষ আদায় করে বলে অভিযোগ আছে।
তারা বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচারিক প্রক্রিয়া এই ধরণের প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তখন মানুষের বঞ্চনা বাড়ে এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়ে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৪
আপনার মতামত জানানঃ