বালিজুরিতে আদিবাসীদের উচ্ছেদের চক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল। সোমবার ঢাকা থেকে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল গারো পাহাড়ের আশপাশের ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় এবং বালিজুরিতে সংবাদ সম্মেলন করে একথা জানান।
শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, বালিজুরির খ্রিস্টান পাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও আমরা দেখেছি মধুপুরে বাসন্তি রেমার কলা ক্ষেত কেটে দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্র যখন মানুষকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তাদের এ উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলায় লঙ্ঘিত হচ্ছে বনবাসীর অধিকার। কথিত সামাজিক বনায়নে আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব না থাকায় তাদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-তত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলের নেত্রী জোবাইদা নাসরীন বলেন, পরিদর্শনকালে আমাদের মনে হয়েছে, বালিজুরিতে আদিবাসীদের উচ্ছেদের চক্রান্ত হচ্ছে। এ ঘটনার জন্য দায়ী বনবিভাগের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-তত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ভূমি ও আইন সম্পাদক উজ্জল আজিম, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী ছাত্র নেতা অলিক মৃ, অ্যাডভোকেট বুলবুল আহমেদ, শেরপুর জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ ও শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন। ঘটনাস্থল বালিজুরির খ্রিস্টান পাড়া গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে বালিজুরি রেঞ্জ অফিসে জেলা বন সংরক্ষক প্রাণতোষ রায়সহ বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ ও শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তারের সঙ্গেও কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। জেলা প্রশাসক তাদের আশ্বাস দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং তাদের উচ্ছেদ করা হবে না।
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে ৯টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। এদের মধ্যে মান্দি (গারো), কোচ, হাজং, বর্মণ, ডালু, হদি, বানাই ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। বংশপরম্পরায় তারা শত শত বছর ধরে পাহাড়ি জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কিন্তু গত ১২ আগস্ট উপজেলার শিমুল ইউনিয়নের বালিজুরি গ্রামে ভূমি উদ্ধারের নামে পাঁচটি মান্দি পরিবারের দেড় একর জমির সবজি ও সুপারি বাগান কেটে ধ্বংস করে ফেলে বনবিভাগের লোকজন। বনবিভাগের এ আচরণে ক্ষুব্ধ আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের বক্তারা বলেন, দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় হয়, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়, কিন্তু আমরা আদিবাসীরা যুগযুগ ধরে পাহাড়ে জঙ্গলে বসত করে আসছি, আমাদের স্থায়ী আবাসন হয় না। আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলের কোনো নিরাপত্তা নেই। দুষ্কৃতিকারীরা আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, ফসল কেটে নেয়। আমরা নিরাপত্তাহীন।
দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় হয়, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়, কিন্তু আমরা আদিবাসীরা যুগযুগ ধরে পাহাড়ে জঙ্গলে বসত করে আসছি, আমাদের স্থায়ী আবাসন হয় না। আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলের কোনো নিরাপত্তা নেই। দুষ্কৃতিকারীরা আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, ফসল কেটে নেয়। আমরা নিরাপত্তাহীন।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী বালিজুরি খ্রিস্টান পাড়া গ্রামের খ্রিস্টান গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ গ্রামে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অর্ধ শতাধিক পরিবারের বসবাস। গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত উপজেলার রানিশিমুল ইউনিয়নের বালিজুরি খ্রিস্টানপাড়া। ওই গ্রামে অর্ধ শতাধিক পরিবারের ছোট বড়ো নারী-পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতাসহ চার শতাধিক লোকের বসবাস। অভাব অনটন দুঃখ আর দুর্দশাই যেন এ গ্রামবাসীদের নিত্যসঙ্গী। এরা পায় না তুলনামুলকভাবে সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা।
এসব পরিবারের সদস্যদের নেই কোন জমিজমা। বন বিভাগের জমির উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শ্রীবরদী উপজেলার রানিশিমুল ইউনিয়নের বালিজুরি খ্রিস্টান পাড়া গ্রামটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। উত্তরে উচু পাহাড়,পশ্চিমে উচু পাহাড়, পূর্ব দিকে উচু পাহাড়। দক্ষিনে সমতল ভূমি। এ গ্রামে প্রবেশ করলে যে কারো কাছেই মনে হবে এ গ্রামটি যেন ছিট মহল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১১
আপনার মতামত জানানঃ