জনগণের করের টাকা দিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই একেকটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্পের পরিকল্পনা করে টাকা নষ্ট করা কিংবা প্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্প তৈরী করলেও তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূরণ না করে ডাবল কাটা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে দিয়ে জনগণের টাকাগুলো জলে ঢালা হচ্ছে।
দিনাজপুরের বিরামপুরের জোতবানী ইউনিয়নে রাস্তা ছাড়াই মাঠের মাঝখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সেতুটির একপাশে গ্রাম আর অন্যপাশে ডোবা। স্থানীয়দের কোনও কাজে লাগছে না ১৯ লাখ টাকার দিয়ে তৈরী এই সেতু।
উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের জোতবানী গ্রাম ও কাঠলা ইউনিয়নের শৈলান গ্রামের সংযোগস্থলে রয়েছে বিস্তৃত ফসলি মাঠ। মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট ডোবা। দুই গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা নেই। অথচ ফসলি মাঠের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
জোতবানী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম এক দৈনিককে বলেন, জোতবানী ও শৈলান গ্রামের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রাস্তা নির্মাণ না করেই সেতু করা হয়েছে। এ জন্য মানুষের কাজে আসছে না। মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত রাস্তা নির্মাণের দাবি জানাই।
একই গ্রামের বাসিন্দা মেহেদুল ইসলাম ঐ দৈনিককে বলেন, সেতু হলেও রাস্তা না থাকায় এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামে যেতে পারছে না। সেতু রেখে জমির আইল দিয়ে মানুষ চলাচল করে। একটা রাস্তা নির্মাণ করলে দুই গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার পরিবর্তন হতো।
জোতবানী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের কারণ হলো দুই গ্রামের মানুষের অনেক জমিজমা আছে। কিন্তু সেখানে ডোবা থাকায় ধান নিয়ে আসতে পারে না গ্রামের মানুষ। এ জন্য সেতু করা হয়েছে। জোতবানী ইউনিয়নের মধ্যে যেটুকু রাস্তা পড়েছে সেটুকু বেঁধে দিয়েছি। পাশের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তার ইউনিয়নে যেটুকু পড়েছে নির্মাণ করে দেবেন বলেছেন। সেতু হওয়ায় আমার এলাকার মানুষের উপকার হয়েছে। এখন রাস্তা হলেই যাতায়াত করতে পারবে।
কাঠলা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ওখানে রাস্তা নেই। নতুন রাস্তা নির্মাণের কথা বলেছেন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। তবে এখন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের বিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল সাদিক বলেন, ওখানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আমাদের কাঁচা কোনও সড়ক নেই। এমন সড়ক নির্মাণের কথাও নেই। হয়তো উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অধীনে ওই সড়ক নির্মাণ হবে, সেতুও তারা করেছে।
বিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা মো. কাওসার আলী বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসীর জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছো
এমন অপ্রয়োজনীয় জায়গায় সেতু এটিই প্রথম নয়। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও সড়ক নির্মিত হয়নি। উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জৈনসার কাঁঠালতলী খাল। ওই খাল পারাপারের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণ করা হলেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
সংযোগ সড়কের অভাবে দুই গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পানিতে ভিজে খাল পার হয়। গ্রামবাসী জানান, সেতুটি নির্মাণের খবরে খুশি হয়েছিলেন গ্রামবাসী। তারা ভেবেছিলেন সেতুর সঙ্গে সড়কও নির্মাণ হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি।
ফলে সড়ক না থাকায় চলাচল করতে অসুবিধা হওয়ায় সেতুটি তাদের কপালে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জনস্বার্থে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের মাটির কাজ জরুরি ভিত্তিতে ভরাটের দাবি জানান গ্রামবাসী।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে এবং উপজেলা ত্রাণ শাখার বাস্তবায়নে সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের কাঁঠালতলী মুজাহিদপাড়া গ্রামের মোতালেব ফকিরের বাড়ির খালের ওপর ৩৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয়ে ৩৮ ফুটের আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়।
প্রায় ছয় মাস পার হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়কের মাটির কাজ রহস্যজনক কারণে শেষ না করায় সেতুটি চার পাশে পানি জমে আছে। বন্যার কারণে খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুজাহিদপাড়া কাঁঠালতলীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পানিতে ভিজে পারাপার হয়। শিক্ষার্থীরা পারাপার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে বই-খাতা, জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
মুজাহিদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলম, পারভীন বেগম, সাইফুল আলম রাজুসহ বেশ কয়েকজন জানান, সেতু করছে কিন্তু সেতু পার হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কবে মাটি ফেলে রাস্তা করবে কে জানে। রাস্তা না হলে এই সেতু গ্রামের মানুষের কোনো উপকারে আসবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আইমিন সুলতানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। সেতুর কাজ এখনও শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি অর্থ জমা আছে, অচিরের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করা হবে
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২২১৫
আপনার মতামত জানানঃ