দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলায় দুটি মসজিদে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪৭ জনকে আটক করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পৃথক দুটি দল। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শহরের মহারাজার মোড় মেদ্যাপাড়ায় বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়। সূত্র মতে, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান পারিচালনা করা হয়।
এ সময় সদর উপজেলার মেদ্দাপাড়ায় বায়তুল ফালা জামে মসজিদ থেকে ৩০ জন ও বিরল উপজেলার বিরল বাজার জামে মসজিদ থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাতে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট দিনাজপুর শহরের মহারাজার মোড়ে একটি মসজিদে অভিযান পরিচালনা করেছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। তবে কতজন আটক হয়েছে, তা এখন জানানো সম্ভব হচ্ছে না। যাচাই-বাছাই শেষে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ওই দুই মসজিদে দুদিন আগে ঢাকা থেকে তাবলিগ জামাত এসেছিল। এটিইউর কাছে তথ্য ছিল, তারা জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করতে তাবলিগ জামাতের নামে দিনাজপুর সদর উপজেলার মেদ্দাপাড়ায় বায়তুল ফালা জামে মসজিদ ও বিরল উপজেলার বিরল বাজার জামে মসজিদে অবস্থান করছে।
এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুর পুলিশের সহযোগিতায় রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত মসজিদ দুটিতে অভিযান চালানো হয়।
এসময় বায়তুল ফালা জামে মসজিদ থেকে ৩০ জন ও বিরল উপজেলার বিরল বাজার জামে মসজিদ থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়। আটকদের সঙ্গে থাকা বিছানাপত্রসহ যাবতীয় মালামাল জব্দ করেছে পুলিশ। আটকের পর রাতেই তাদের দিনাজপুর পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে।
বিরল বাজার জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে আসা তাবলিক জামায়াতের ১৭ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে।
বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের খাদেম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বৃহস্পতিবার ২২ জন মানুষ ঢাকা থেকে আসেন। তাদের মধ্যে ১২ জন এখানে অবস্থান করে এবং বাকিরা অন্য মসজিদে থাকার কথা বলে চলে যান। রাতে এশার নামাজের পরে আমরা বাসায় চলে গেলে তারা এই মসজিদেই অবস্থান করছিল। পরে রাতে শুনতে পারি তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
যদিও এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, তাদের কাছে তাবলিক জামায়াতের নামে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য ছিল। এজন্য তাদের আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে এলেও তারা আবার মাথা চাড়া দিতে পারে।
এই উদ্বেগের পেছনে ভিত্তি হিসাবে তারা আফগান যুদ্ধ এবং সিরিয়ায় আইএস-এর পক্ষে যুদ্ধে বাংলাদেশের কিছু লোকের অংশ নেয়ার বিষয়কে তুলে ধরেন। তালেবানের কাবুল দখলের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে নানা আশঙ্কা বা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ জোরেশোরেই।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তান আশির দশকে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে ছিল, বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তানে মুজাহেদিন বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে গিয়েছিলেন।
জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, আফগানিস্তান থেকেই জঙ্গি তৎপরতা বাংলাদেশে এসেছে এবং সেজন্য সেখানে আবার তালেবানের উত্থানে নতুন করে শঙ্কার বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে উগ্রবাদ আগে কখনও ছিল না। আফগান ফেরতরা প্রথমে মুসলিম জাগ্রত বাহিনী গঠন করেছিল। এই জঙ্গিবাদ একেবারে আফগানিস্তান থেকে এসেছে। সেজন্য এখন আবার শঙ্কার বিষয় আসছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ