ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী মিজান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
মিজান বিশ্বাস কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য এবং ইবির শাখা ছাত্রলীগ কর্মী। মিজানের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন ইবির ৭৩ ছাত্রী। ‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফিউশন’ নামের একটি পেজ থেকে এ সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই পেজ থেকে আপত্তিকর ক্যাপশন (ইবি কাঁপানো সব সুন্দরী একসাথে, ইমো নাম্বার পেতে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে সঙ্গেই থাকুন) লিখে একসঙ্গে ৭৩ জন ছাত্রীর ছবি প্রকাশ করা হয়।
পরে মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে রাত ১২টার দিকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। একইসাথে দুঃখ প্রকাশ করে পুনরায় পোস্ট করা হয়।
এ ঘটনার পর ওই পেজের অ্যাডমিনকে দায়ী করে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিন্দা জানিয়েছেন।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী এক ছাত্রী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই আমার ছবিসহ ৭০-৮০ জন মেয়ের ছবি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পেজে অশ্লীল ঈঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেখে হতবাক হয়ে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগেকার হয়রানির ঘটনার বিচার করেনি এর জন্য পুনরাবৃত্তি ঘটছে, আরো ঘটবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রী বলেন, এমন কুরুচিপূর্ণ কাজ নিচু মানসিকতার মানুষরা ছাড়া পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা এদের কারণেই অনিরাপদ। এই পোস্ট যারা করেছে তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
ওই পেজটির একমাত্র অ্যাডমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মিজান বিশ্বাস। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা থানায়। ২০১৮ সাল থেকে ছয় হাজার সদস্যবিশিষ্ট ওই পেজটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন মিজান। ওই পেজের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময় নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে মিজান বিশ্বাস বলেন, পেজে অনেক দিন কিছু পোস্ট করা হয় না। তাই মজা করে করেছি। এত বড় ভুল হবে বুঝতে পারিনি। সবাই নেগেটিভ কমেন্ট করতে থাকলে পোস্টটি ডিলেট করেছি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারাও তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। যদিও এখনো কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ঘটনাকে কঠোরভাবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওই পেজের অ্যাডমিনকে খুঁজে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, অভিযুক্তকে খুঁজে বের করতে আইটি সেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ নেব। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, পূর্বেও ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও এখনো কোনো বিচার হয়নি।
আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত বিচার দাবি করেও বিচার পাই না। কর্তৃপক্ষের ঢিলেমি ও অবহেলার কারণেই আমরা বারবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কারা পেজটি চালায় তা দেখতে আইসিটি সেল কাজ করছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এর আগেও একাধিকবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন ইবি শিক্ষার্থীরা। গত ১১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ ওঠে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হুমকির শিকার হলে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনা তদন্ত কমিটি পর্যন্তই আটকে আছে এবং প্রশাসন কার্যকরী তো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আর এই কারণেই বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ