আফগান নাগরিকত্ব থাকার পরও জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না বলে চীনকে আশ্বস্ত করেছে আফগানিস্তান। এর মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা জড়ো হয়েছে উইঘুরদের মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন তালিবানের অধীনে চলে যাওয়ায় তাদের পরিচয়পত্র ও রেকর্ড তালিবানের মাধ্যমে চীনের হাতে চলে যেতে পারে।
তেমনটা হলে উইঘুরদের খুঁজে বের করে চীনে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তাদের পরিচয়পত্র ও কাগজপত্রে লেখা আছে তারা ‘চীনা অভিবাসী’। চীন-তালিবান দ্বৈরথ মূলত নতুন এই বিপর্যয়ের মধ্যে এনে দাঁড় করিয়েছে উইঘুরদের।
তালিবানের সঙ্গে চীনের যোগাযোগের সেই শুরু থেকেই; ১৯৯০ দশকে। পুরো সময় জুড়ে সুবিধাবাদী তালিবানের সঙ্গে সুযোগসন্ধানী চীনের এক ধরনের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ সমঝোতা চলমান ছিল; যেটি এখন প্রকাশ্যে এসেছে। সম্পর্ক আর দৃঢ় হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মতামত। আর এই সম্পর্কের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ প্রসঙ্গ উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠী।
আফগানিস্তান সরকারে কোনও না কোনও ভূমিকা যে থাকবে তালিবানের, সেটা চীন সরকার ধারণা করতে পেরেছিল বেশ আগে থেকেই। যে কারণে সীমিতভাবে হলেও তালিবানকে সহায়তা করার সম্পর্ক বজায় রাখে চীন। আখেরে তাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এবার জাল গোটাবে চীন। আর্থিক সহায়তার নামে নিজেদের পরিকল্পনা একে একে বাস্তবায়ন করবে তারা।
এটাই উইঘুরদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কারণ সরকার পতনের পর তালিবানের হাতে যখন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও নিবন্ধনের কাগজপত্র আসছে সেটা উইঘুরদের বিপক্ষে ব্যবহার করা হতে পারে। তাদের ফেরত পাঠানো হতে পারে চীনে। নির্মম নির্যাতন আর পরাধীনতার জীবনে। যেমনটা করেছে পাকিস্তান। আর্থিক সুবিধার কারণে চীনের হাতে তুলে দিয়েছিল উইঘুরদের।
চীন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি মাত্রায় জড়িত না থাকলেও, ছোটখাট অভিযান, পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি বাড়াতে পারে। তবে আকারে ছোট হলেও এর মূল লক্ষ্য থাকবে উইঘুরেরা। এই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানে উইঘুরদের সাথে হওয়া অন্যায়।
মুসলমানদের মুক্তির ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে পাকিস্তান, উইঘুরের মুসলমানেরা সেখানে পালিয়েও টিকতে পারছে না। চীনের নির্দেশে তাদের আটক করা হচ্ছে, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে উইঘুরদের প্রতিষ্ঠান। অনেককে আবার চীনে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ওই সব ফেরত পাঠানো ব্যক্তির আর খোঁজ মিলছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অভিযোগমতে, চীন প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে রি-এডুকেশন সেন্টার নামের বন্দিশালায় আটকে রেখেছে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস ও আচরণ বদলে দিয়ে চীনাকরণ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যেমন আফগান নারীদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল; চীন বলছে তারা উইঘুর নারীদের কেবল সন্তান জন্ম দেওয়ার হাত থেকে মুক্তি দিচ্ছে। মুক্তি দিচ্ছে বন্ধ্যাত্বকরণ করে। বন্দিশালায় ধর্ষণের অভিযোগও করেছে পালিয়ে আসতে পারা উইঘুরেরা।
সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমদের নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে চীন।
এর আগে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও প্রায় একই ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে চীনের সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে উইঘুরদের প্রতি চীনের নীতিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। চীন অবশ্য উইঘুরদের বিরুদ্ধে যে কোনও প্রকার অত্যাচারের কথা অস্বীকার করে। তাদের অভিযোগ, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের দেশগুলো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি এই চেষ্টায় উইঘুর ইস্যুকে হাতিয়ার বানাচ্ছে পশ্চিমারা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫৪
আপনার মতামত জানানঃ