পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চরম শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শেরপুর জেলার অন্তর্গত শ্রীবরদী উপজেলার খ্রিস্টানপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের শত শত আদিবাসী। জানা যায়, সম্প্রতি বন বিভাগের বালিজুরি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম নেতৃত্বে স্থানীয় চার-পাঁচজনের প্রায় ৪০ শতাংশ জমির সবজিক্ষেত ও বসতবাড়ির শতাধিক সুপারির চারা কর্তন করেছে।
শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকা রানীশিমুল ও সিংগাবরনা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। এখনে ব্রিটিশ আমল থেকে বসবাস করে আসছে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গারো, হাজং, বানাই, কুচসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক। আগে তারা জুম চাষ করত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে জুম চাষ। এখন একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্রতীন মারাক বলেন, বালিজুরি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে সবজিক্ষেত ও বসতবাড়ির শতাধিক সুপারির চারা কর্তন করেন। এতে অসহায় হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
তিনি আরো বলেন, সবজিক্ষেত করার অনুমতি দিয়ে এখন তারা কর্তন করছে। এতে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই, বন বিভাগ যেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি এলাকা খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের বিহার জাম্বিলের স্ত্রী ভারতীয় মৃ (৫৫) বলেন, ‘আমরা আদিবাসী। এইহানে যুগ যুগ ধইরা বসবাস করে আসছি। পাহাড়ের টিলায় বাড়ি। এইহানেই সবজির চাষ করি। মাত্র দুই কাঠা জমিতে বরবটি, শিমুল, আলু আর বেগুনের চাষ কইরা সংসার চালাই। ফরেস্টের লোকেরা আইয়া ক্ষেতের সব গাছ কাইটা ফালাইছে। অহন ক্যামনে চলুম?’
তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে। এডার ওপর সংসার। ধারদেনা কইরা সবজির ক্ষেত করছি। এডাও শেষ কইরা দিল। আমরা কার কাছে এর বিচার চাইমু?’
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব অভিযোগ করা সংখ্যালঘু হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই নারীর মতো একই অভিযোগ তুলেছেন তার প্রতিবেশী লিন্দার সনের স্ত্রী সভানি সিমসাং (৫৬)।
সভানি সিমসাং বলেন, ‘আমি ২০ শতাংশ জমিতে লাউ, ঝিঙা আর বরবটির আবাদ করছিলাম। আজ ফরেস্টের লোক আইয়া ক্ষেতের সব গাছ কাটছে। আমরা অহন কী করমু?’
যদিও বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের জমিতে তারা জোরপূর্বক সবজি চাষ করেছে। সেখানে সুফল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য ওইসব সবজিক্ষেতের গাছ কেটে সুফল প্রকল্পের বৃক্ষের চারা বেড়ে ওঠার জন্য পরিষ্কার করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। এদিকে বন কর্মকর্তাদের এমন সিদ্ধান্তে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আদিবাসীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ