কলের পানি সরাসরি পান করা খারাপ কিন্তু বোতলজাত পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য আরও খারাপ। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরিবেশের ওপর বোতলজাত পানি সাধারণ কলের পানির চেয়ে ৩,৫০০ গুণ বেশি খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে বোতলজাত পানির ব্যবহার বন্ধ করার আরও একটি কারণ যুক্ত হলো। স্পেনের বার্সেলোনায় বোতলজাত পানির ব্যবহারের উপর গবেষণা করে বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ (আইএসগ্লোবাল) এই তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
বোতলজাত পানির প্রভাবের এই পরীক্ষা স্পেনের বার্সেলোনাতে করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে কলের পানির গুণমানের উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও বোতলজাত পানি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম।
বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের (আইএসগ্লোবাল) নেতৃত্বে করা গবেষণায় দেখা গেছে, যদি শহরটির সকল মানুষ বোলতজাত পানি পান করে, তাহলে সম্পদ আহরণের খরচ কলের পানি পান করলে যে খরচ হতো, তারচেয়ে ৩৫০০ গুণ বেশি হবে। বছরে এই খরচের পরিমাণ ৮৩.৯ মিলিয়ন ডলার বা ৬০.৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
সায়েন্স ডাইরেক্টে প্রকাশিত গবেষণায়, গবেষকরা কাঁচামাল (বোতল তৈরি করা) থেকে উৎপাদন, বিতরণ, পরিবহন, ব্যবহার এবং নিষ্পত্তিসহ সবকিছু মূল্যায়ন করে দেখিয়েছেন যে, বোতলটি তৈরি করার জন্য এতে যে পরিমাণ পানি থাকে, প্রকৃতপক্ষে তিনগুণ পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়।
বার্সেলোনার গবেষণা থেকে জানা যায়, সেখানে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ বোতলজাত পানি পান করে। সেখান থেকে কিছু অবিশ্বাস্য তথ্য উন্মোচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছে যে, যদি সমগ্র জনগোষ্ঠী বোতলজাত পানি পান করতে শুরু করে, তাহলে যে পরিমাণ উৎপাদন করতে হবে, তার জন্য বছরে ১ দশমিক ৪৩টি প্রজাতি বিলুপ্ত হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আহরণে বছরে প্রায় ৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার খরচ হবে। উপরন্তু, বাস্তুতন্ত্রের উপর ১ হাজার ৪০০ গুণ বেশি প্রভাব পড়বে এবং সম্পদ আহরণের খরচ ৩ হাজার ৫০০ গুণ বেশি হবে।
দুর্ভাগ্যক্রমে, বোতলজাত পানির জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। ২০২০ সালে আমেরিকানরা ১৫ বিলিয়ন গ্যালন বোতলজাত পানি কিনেছিল এবং সোডা বিক্রি কমে যাওয়ায় এটি দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা যার কারণ বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বিপণন বৃদ্ধি এবং স্থানীয় পানির গুণমান নিয়ে সাধারণ অবিশ্বাস।
যদি সমগ্র জনগোষ্ঠী বোতলজাত পানি পান করতে শুরু করে, তাহলে যে পরিমাণ উৎপাদন করতে হবে, তার জন্য বছরে ১ দশমিক ৪৩টি প্রজাতি বিলুপ্ত হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আহরণে বছরে প্রায় ৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার খরচ হবে। উপরন্তু, বাস্তুতন্ত্রের উপর ১ হাজার ৪০০ গুণ বেশি প্রভাব পড়বে এবং সম্পদ আহরণের খরচ ৩ হাজার ৫০০ গুণ বেশি হবে।
একটি সূত্রের মতে, আমেরিকানরা যে সমস্ত প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার করে তা উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ তেলের প্রয়োজন হয় তা ১০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যথেষ্ট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বোতলজাত পানির চাহিদা পূরণের জন্য প্লাস্টিক তৈরিতে বছরে ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের প্রয়োজন হয়। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে বোতলজাত পানি কলের পানির চেয়ে কমপক্ষে ৫০০ গুণ বেশি ব্যয়বহুল।
পানির কলের সঙ্গে যুক্ত মূত্রাশয় ক্যান্সারের ক্ষুদ্র ঝুঁকির চেয়ে পরিবেশগত প্রভাব কমানো বেশি জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। পানীয় জল পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া নিম্ন স্তরের ট্রাইহলোমিথেনস (টিএইচএম) তৈরি করে, যা মূত্রাশয় ক্যান্সারের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। বলে রাখা ভালো, ইউরোপিয়ন ইউনিয়নে পানীয় জলের টিএমএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং আইএস গ্লোবাল গবেষক ক্রিস্টিনা ভিয়ানুয়েভা বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিষয়ক কারণগুলো বোতলজাত পানির ব্যাপক ব্যবহারকে সমর্থন করে না। তবে হ্যাঁ, কঠোরভাবে বলতে গেলে কলের পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। কিন্তু যখন আপনি দুটো তুলনা করবেন, বোতলজাত পানি পান করে আপনার লাভ খুবই কম। এটা বেশ স্পষ্ট যে, বোতলজাত পানির পরিবেশগত প্রভাব কলের পানির তুলনায় বেশি।’
ভিয়ানুয়েভা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ গবেষণা বোতলজাত পানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে; তবে এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য আমাদের আরও সক্রিয় নীতি দরকার। উদাহরণস্বরূপ, বার্সেলোনায় আমরা জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য আরও শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে পারি। সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত আমাদের পানি, ফোয়ারা ও বিল্ডিংগুলোতে অবস্থার উন্নতি করতে হবে, যেখানে যে কেউ নিজের বোতল আনতে পারবে।’
আরও বলেন, ‘লোকেরা বোতলজাত পানির ওপর আস্থা রাখে, কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা এই পানিকে একটি ভালো বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন। তাই আমাদের অন্যদিকে প্রচেষ্টার দরকার’।
বার্সেলোনায় গবেষকরা যে বিষয়টি খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে অবিশ্বাস একটি অংশ। যদিও গত কয়েক বছরে শহরের পানির গুণগত উন্নতি হয়েছে, কিন্তু কলের পানির ব্যবহার বাড়েনি। এ বিষয়ে আইএস গ্লোবাল গবেষক ক্রিস্টিনা ভিয়ানুয়েভা বলেন, ‘এটি ইঙ্গিত দেয় যে পানির ব্যবহার গুণগত মান ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গত কারণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ