সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়গাভেদে কোনো কোনো সড়কে দুর্ঘটনার পরিমান বেশি। এর মধ্যে একটি হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
সড়ক দুর্ঘটনার মামলার নথিপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই বছরে (২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত) যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৮২ শতাংশ ঘটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন তিন মহাসড়কে গত আড়াই বছরে দুর্ঘটনায় নিহত ১০৩ জন।
এই মহাসড়কের সায়েদাবাদের জনপথ মোড় থেকে সাদ্দাম মার্কেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে মাতুয়াইল মেডিকেলের সামনে (১৩ জন)। এরপর রায়েরবাগ পদচারী-সেতুর নিচে ও সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে মারা গেছেন ৯ জন করে। এ ছাড়া মহাসড়কের সাদ্দাম মার্কেটের সামনে মারা গেছেন আরও ৫ জন। এ ছাড়া বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা, কাজলারপাড় ও শনির আখড়ায়।
গত আড়াই বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে যাত্রাবাড়ী থানায় করা ১০৩টি মামলার মধ্যে ২৮টির নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন এক জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদক। এসব নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ২৩ জনই ছিলেন পথচারী। রাস্তা পারাপারের সময়ই দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। বাকি ৫ জন ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী। প্রতিটি মামলায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম খান ঐ জাতীয় দৈনিককে বলেন, মূলত পথচারীরাই রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন।
সড়ক বিভাজকের ফাঁকা অংশ টপকে দৌড় দিয়ে পারাপারে তাদের আগ্রহ বেশি। মহাসড়কের কাজলারপাড়ের বিভাজকের ফাঁকা অংশ দিয়ে প্রতিমুহূর্তে শত শত মানুষ পার হচ্ছেন। একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান রায়েরবাগ পদচারী-সেতুও মানুষজন ব্যবহার করেন না। বরং চরম ঝুঁকি নিয়ে বিভাজক টপকে রাস্তা পারাপার হন পথচারীরা। একই চিত্র দেখা গেছে মাতুয়াইলের শিশু মাতৃসদন ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনেও। এই হাসপাতালের সামনেও রয়েছে পদচারী-সেতু।
যাত্রাবাড়ী থানাধীন হানিফ উড়ালসড়কেও প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত আড়াই বছরে এই সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কমুখী অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছে তিনটি। বাকি তিনটি ঘটেছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দোলাইরপাড় অংশে।
যাত্রাবাড়ী থানায় চলতি বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত ১২টি মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, এসব মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে অজ্ঞাত চালক।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ঐ জাতীয় দৈনিককে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী বেশির ভাগ মামলার আসামি ধরা পড়েন। যারা এখনও ধরা পড়েননি, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ২০১৯ সাল ও ২০২০ সালে করা সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত ১৯টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে মামলা করার পরও আসামিপক্ষের সঙ্গে আপস করে ফেলেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কেন এত বেশি দুর্ঘটনা হচ্ছে, বিষয়টি তলিয়ে দেখার জন্য গবেষণা জরুরি বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যাত্রাবাড়ী থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাত্র চার কিলোমিটারে আড়াই বছরে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা একেবারই অস্বাভাবিক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো কিংবা পথচারীদের অসচেতনতার কারণে মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেটি হয়তো একটা কারণ। তবে মহাসড়কের এই অংশে প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা হতে পারে, সেটি জানার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/০০৩০
আপনার মতামত জানানঃ