বিদেশে সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির মাধ্যমে আমেরিকান সমকামী দম্পতিদের জন্ম দেয়া শিশুরাও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবে। ফলে, সমলিঙ্গের দম্পতিরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে সারোগেসিসহ অন্যান্য মাধ্যমে সন্তান নিলে সেই সন্তানরাও নাগরিকত্ব লাভ করবে। খবর বিবিসি
এর আগে, দেশের বাইরে জন্ম নেওয়া শিশুদের সাথে আমেরিকান বাবা অথবা মা’র রক্তের সম্পর্ক থাকলেই কেবল নাগরিকত্ব পেত এই শিশুরা। তবে, কৃত্রিম প্রজননের অনেক ক্ষেত্রেই আমেরিকান অভিভাবকের সাথে শিশুদের জেনেটিক্যাল সম্পর্ক থাকত না।
সাম্প্রতিক কয়েকটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। সারোগেসিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সন্তানের অভিভাবকদের দায়ের করা মামলার রায়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার (ইউএসসিআইএস) অংশ হিসেবে নতুন এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।
নতুন নীতিমালা অনুসারে, বিবাহিত দম্পতিদের বাইরে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের ক্ষেত্রে অন্তত একজন অভিভাবক আমেরিকান হলে সন্তান নাগরিকত্ব ও পারিবারিক সুবিধা লাভ করবে।
অর্থাৎ আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে আমেরিকান মা বা বাবার কমপক্ষে একজনের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক থাকতে হবে বিদেশে ভূমিষ্ঠ সন্তানের।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারোগেট (গর্ভ ভাড়া করা) ও অন্যান্য পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেয়া দম্পতিদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব নীতিমালা সম্প্রসারণ করে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকান নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবার (ইউএসসিআইএস) নতুন গৃহীত নীতির আওতায় বিবাহিত দম্পতিদের কমপক্ষে একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও আবেদনকারী সন্তানের সঙ্গে জৈবিক সম্পর্কে সম্পর্কিত হতে হবে। এ শর্ত পূরণ করতে পারলে ওই সন্তান নাগরিকত্ব ও পারিবারিক সুবিধার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ইউএসসিআইএস পরিচালক উর জাডৌ জানান, আইনটির নতুন ধারায় ‘সব পরিবার ও তাদের স্বজনদের জন্য ন্যায্য প্রবেশাধিকার ও সমর্থন’ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, নতুন নীতিটির আওতায় আসবেন ভিন দেশে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার পরিবার।
এলজিবিটিকিউ (লেসবিয়ান, গে, বাইসেকচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার ও কুইয়ার) সম্প্রদায়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন ইক্যুয়ালিটির নির্বাহী পরিচালক অ্যারন মরিস জানান, হাজারো দম্পতি নতুন নীতির সুবিধা পেলেও তাদের সংখ্যা অস্পষ্ট।
তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে তাদের অভিভাবক এ দম্পতিদের বিয়েকেও এতদিন ধরে অসম্মানিত করে আসছিল প্রশাসন। এতে পরিবারগুলোর পুরোনো আঘাতের ওপর নতুন ক্ষত তৈরি হচ্ছিল।’
এমনই এক সমকামী দম্পতি জেমস ডেরেক মিজে ও জোনাথন গ্রেগ। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে সারোগেটের মাধ্যমে জন্ম নেয় তাদের মেয়ে সিমন। ডেরেক ও গ্রেগ আমেরিকান হলেও তাদের সন্তান এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পায়নি। এর কারণ সিমনের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে কেবল গ্রেগ মিজের। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ছিলেন বলে নাগরিকত্বের আবেদনে সিমনকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল আমেরিকান প্রশাসন।
এ ছাড়া সিমনের অভিভাবক হিসেবে দুইজন বাবাকেও স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
মিজে জানান, ওই পরিস্থিতি ‘মানসিকভাবে ভীষণ চাপের আর বিভ্রান্তিকর’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘সত্যিই বুঝতে পারছিলাম না যে শেষ পর্যন্ত কী হবে। ছয় মাস, এক বছর, তিন বছর কিংবা ১০ বছরেও এই জটিলতা শেষ হতো কি না, কোনো ধারণাই ছিল না।’
আটলান্টা অঙ্গরাজ্যের একটি ফেডারেল আদালত সিমনকে নাগরিক ঘোষণা করলেও সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে তার নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া থমকে ছিল। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন মিজে।
এতদিন ‘রাষ্ট্রহীন’ সন্তান নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন অনেক সমকামী দম্পতি। নতুন নীতির ফলে ভবিষ্যতে তারাই বিদেশে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মতো সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির সহায়তা নিতে আগ্রহী হবেন বলেও আশাবাদী এই সমকামী বাবা।
নাগরিকত্বহীন সন্তান জন্মদানের দুশ্চিন্তায় যেসব দম্পতি এখন পর্যন্ত সন্তান নেননি, তারা এখন কৃত্রিম প্রজনন সেবা নিতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন মাইজ।
মে মাসে একই ধরনের একটি পারিবারিক নীতিতে পরিবর্তন আনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট। সেখানে বলা হয়, ‘আধুনিক পরিবারের বাস্তবতা’ বিবেচনা এবং প্রজনন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে ১৯৫২ সাল থেকে প্রচলিত নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৩
আপনার মতামত জানানঃ