আফগানিস্তানকে পুরোপুরি হাতের মুঠোয় আনতে এবার তালিবানদের লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো। তালিবানরা যে কূটনৈতিক পরিকল্পনা ভালোভাবে করেই কোমড়ে কাপড় বেঁধে মাঠে নেমেছে তা বোঝা যাচ্ছে তাদের অগ্রগতি দেখে। কাবুল আর দুটি প্রদেশ ছাড়া সব প্রদেশে আফগান সরকারের কারফিউ জারি করার পরেও তালিবানরা আফগানের একাাধিক গূরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালিয়েছে। আজ রোববার (১ আগস্ট) বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
শহরগুলো হলো হেরাত, লস্করগাহ ও কান্দাহার। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় এই তিন শহর ঘিরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালিবানের লড়াই জোরদার হচ্ছে। আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে এই তিন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে চায় তালিবান।
বিবিসি বলছে, হেরাত, লস্করগাহ ও কান্দাহারের অংশবিশেষে প্রবেশ করেছে তালিবান।
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে জাতিসংঘের প্রধান কম্পাউন্ডে হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত একজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন। তবে জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তা হতাহত হননি। গত শুক্রবার চালানো ওই হামলায় ‘সরকারবিরোধীদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ)।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শুক্রবার হেরাত শহরের অনেকখানি ভেতরে প্রবেশ করে তালিবান যোদ্ধারা। এ সময় ইউএনএএমএর আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ের কাছে তাদের সঙ্গে আফগান সেনাদের তুমুল সংঘাত হয়। একপর্যায়ে জাতিসংঘের ওই স্থাপনায় গুলি ও রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন ও মিত্রদের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরুর পর দেশটিতে চলমান সহিংসতায় অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতা থামানো না গেলে আফগানিস্তানে গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ইউএনএএমএ। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে আফগানিস্তানে ১ হাজার ৬৫৯ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৫৪ জন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি।
গত দুই মাসে তালিবান দেশটির অর্ধেকের বেশি এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত–ক্রসিংও তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে তালিবান এখন পর্যন্ত কোনো প্রাদেশিক রাজধানী দখল করতে পারেনি। কিন্তু এখন তারা সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, তালিবানের বর্তমান লক্ষ্য আফগান শহরগুলো দখল করা। তারা এখন যেসব শহর দখলের চেষ্টা করছে, তার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
লস্করগাহে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আফগান সেনাদের সঙ্গে তালিবানের লড়াই চলছিল। লড়াইয়ে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়ছিলেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।
কান্দাহারের এক সাংসদ বলেছেন, তালিবানের হাতে এই শহরের পতনের গুরুতর ঝুঁকি আছে। শহরের হাজারো অধিবাসী ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শহরে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হেরাতেও সংঘর্ষ জোরদার হয়েছে। শহরটির দক্ষিণাংশে তালিবান প্রবেশ করেছে। শহরের অন্তত পাঁচটি স্থানে লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ করা হবে বলে সম্প্রতি জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত মে মাসে সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে তালিবান যোদ্ধারা হামলা ও দখল অভিযান জোরদার করে। আফগানিস্তানে পশ্চিমা-সমর্থিত গনি সরকারকে উৎখাত করে ইসলামি আইন চালু করতে চায় তালিবান। তালিবানের দাবি, তারা ৮৫ শতাংশ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইতিমধ্যে তালিবানরা বিশেষ করে আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলের চেষ্টা করছে। যে শহরগুলোয় তালিবান যোদ্ধারা প্রবেশ করেছে, সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। দেশটির সরকারি বাহিনী এই শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ কতটা সময় ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ