যশোরের অভয়নগর উপজেলার একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষিকাকে মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে একা পেয়ে ধর্ষণ করতে উদ্যত হন ওই মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুস সবুর শেখ(৬৫)। পরে শিক্ষিকার অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ মাদ্রাসার সভাপতিকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুস সবুর শেখ অভয়নগর উপজেলার কোটা পুরুষ ও মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার ও এতিমখানার সভাপতি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসার আবাসিক একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলেজ শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬ টার সময় ওই শিক্ষিকা মাদ্রাসার আবাসিক হলে তার রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় আব্দুস সবুর শেখ তার কক্ষে ঢুকে তার স্বামী কোথায় জানতে চান। এ সময় ওই শিক্ষিকা তার স্বামী ঘরে নেই জানালে সভাপতি ওই নারীকে জাপটে ধরেন। পরে শিক্ষিকা চিৎকার শুরু করলে সভাপতি দৌড়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা বিচার চেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। পরে বুধবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে মাদ্রাসায় একটি সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওই সভাপতির শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সভাপতিকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, আমি সকালে মাদ্রাসার আবাসিকের কক্ষের নির্ধারিত ঘরে ছিলাম। এ সময় মাদ্রাসার সভাপতি সবুর শেখ আমার ঘরে প্রবেশ করে জানতে চান আমার স্বামী কোথায়? আমি বাসায় নেই বললে তিনি আমার গায়ে হাত দেন এবং হাত ধরে টানাটানি করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমি চিৎকার দিলে এলাকাবাসী জড়ো হলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটি জানাজানি হলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকার সচেতন মহল বুধবার বিকালে মাদ্রাসায় সালিশ বৈঠকে বসেন। পরে মাগরিবের নামাজ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা সবুর শেখের বাড়িতে গিয়ে তাকে ধাওয়া করলে তিনি মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক মো. নুরজালাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাদ্রাসার এক শিক্ষিকাকে সভাপতি আব্দুস সবুর শেখ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ওই শিক্ষিকা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে বুধবার রাতে আমরা মিটিংয়ে বসি। এসময় এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
অভিযুক্ত সভাপতি আব্দুস সবুর শেখ বলেন, ঘটনা মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন কুমার মণ্ডল জানান, এলাকাবাসী মাদ্রাসার সভাপতিকে আটক করে গণধোলাই দেয়ার চেষ্টা করছিল, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে আনা হয়। বুধবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা অভিযোগ দায়ের করলে সবুর শেখকে আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে যশোর জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদ্রাসায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। মাদ্রাসার শিক্ষক থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ সভাপতি কেউ বাদ নেই এই তালিকায়। মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারে।
তারা বলেন, অনেকেই যৌন নির্যাতনের ঘটনা মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করছেন। মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কোনো অপরাধ করতে পারে না এমন ভাবা ঠিক না। তাদের মধ্যেও অপরাধের প্রবৃত্তি আছে এবং এটাই স্বাভাবিক। তাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে অপরাধকে এড়িয়ে গেলে, অস্বীকার করলে বা ঢেকে রাখলে সংকট থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। বরং অপরাধ আরও বাড়বে।
তারা বলেন, এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমরা এখনও কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। মাদ্রাসাগুলোতে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতা ভাঙাই সর্বপ্রথম দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৩০
আপনার মতামত জানানঃ