তিউনিসিয়াজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে সোমবার রাজধানী তিউনিসে কাতারভিত্তিক সংবাদ সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অফিসে হানা দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে সব কর্মীকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ফোন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অন্তত ২০ জন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটির ব্যুরো অফিসে হানা দেয়। ঢুকেই তারা বের করে দেয় সব কর্মীকে। তাদের ফোন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বাজেয়াত্ত করা হয় সব সরঞ্জাম।
সাদা পোশাকে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সেখানে অভিযান চালানোর জন্য কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছিল না জানিয়ে আল-জাজিরার ব্যুরো চিফ লতফি হাজ্জি বলেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আমাদের অফিস উচ্ছেদের কোনো আগাম নোটিশ আমরা পাইনি।’
তবে আল-জাজিজার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কর্মীদের উচ্ছেদ ও সরঞ্জাম জব্দ করার সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করছেন, বিচার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এ অভিযান চালিয়েছেন। সেখানকার সব সাংবাদিককে বের করে দিতে বলা হয়েছে।
তিউনিসের আল–জাজিরার সাংবাদিকেরা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের মুঠোফোন বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আনতেও অফিসে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বলেছে, তারা ‘তিউনিসিয়ায় আল-জাজিরার অফিসে হামলা এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে গণমাধ্যমের অংশগ্রহণকে নিন্দা জানাচ্ছে।’
করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনার জেরে সহিংস বিক্ষোভের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি ৩০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন পার্লামেন্ট। দেশটির বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনায় তিউনিসিয়ার সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। এই ক্ষোভ থেকে গতকাল তিউনিসিয়ার রাজপথে নেমে আসেন হাজারো বিক্ষোভকারী। দেশজুড়ে এই বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
এদিকে আজ সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দল ইন্নাদাহর প্রধান রেচড ঘানোচিকে পার্লামেন্টে ঢুকতে বাধা দেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকে দলটি পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। পার্লামেন্টের স্পিকার বেলা তিনটার দিকে পার্লামেন্টে যেতে বাধার মুখে পড়েন।
তবে প্রেসিডেন্ট সাইদের শত শত সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ইন্নাদাহর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এই দলের সদস্যদের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। দুই পক্ষের মধ্যে পাথর ও বোতল–ছোড়াছুড়ি হয় বলে এএফপির একজন ফটোগ্রাফার জানান।
কয়েক বছর ধরে চলা অচলাবস্থা, ক্রমহ্রাসমান রাষ্ট্রীয় পরিষেবা ও বাড়তে থাকা বেকারত্বের কারণে ইতোমধ্যেই অনেক তিউনিসীয় তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ছিল। এরপর গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে ওঠে এবং চলতি গ্রীষ্মে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার বাড়তে শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের ডাক দেয়। কোনো রাজনৈতিক দল তাতে সমর্থন না দিলেও রোববার তিউনিসে ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
তাদের ক্ষোভের প্রধান লক্ষ্য ছিল পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল ইসলামপন্থি ইন্নাদাহ পার্টি। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার দাবি জানায় ও ‘সরে যাও!’ বলে শ্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন ইন্নাদাহ পার্টির কার্যালয়গুলো ভাংচুর করে। তারা তৌজেউর প্রদেশ ইন্নাদাহ পার্টির স্থানীয় কার্যালয়ের কম্পিউটার ভাংচুর করে ও কার্যালয়টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
‘আরব বসন্তের’ আগে নিষিদ্ধ থাকা ইন্নাদাহ ২০১১ সালের পর থেকে তিউনিসিয়ার সবচেয়ে ধারাবাহিক সফল দলে পরিণত হয় এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের তারা বড় অংশীদার ছিল।
দলটির নেতা পার্লামেন্টের স্পিকার ঘানোচি প্রেসিডেন্ট সাইদের ঘোষণার পরপরই রয়টার্সকে ফোন করে তার সিদ্ধান্তকে ‘বিপ্লবের ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৮
আপনার মতামত জানানঃ