নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার। এই ১০ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৯ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতো। এর ফলে কতটা বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়বে দেশ তা নিয়ে আলোচনা হলেও, প্রকল্প বাতিলের ফলে কত টাকার ক্ষতি হল তা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই সংশ্লিষ্ট মহলে।
তবে এই প্রকল্প বাতিলে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে নীতি নির্ধারকরা বলছেন, প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ায় তেমন বড় কোনো প্রভাব না পড়লেও ২০৩০ সালের দিকে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর সে ঘাটতি মেটাতে অন্য সব এলাকার সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা অঞ্চলের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ৮০৪ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ৪ হাজার ৬৩২ মেগাওয়াট, বরিশাল অঞ্চলের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট, রংপুর অঞ্চলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, খুলনা অঞ্চলের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৬৫ মেগাওয়াটসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাদ যাওয়ায় ২০৩০ সালে এ অঞ্চলসমূহের নেট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট হ্রাস পাবে।
ফলে ২০৩০ সালে ঢাকা অঞ্চলে ৩ হাজার ৩৯৭ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১২২৫ মেগাওয়াট, রংপুরে ৬৩৫ মেগাওয়াটসহ মোট ৫২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং রংপুর অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদার ঘাটতি সমন্বয় করা হবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬৯৫৪ মেগাওয়াট, কুমিল্লা ৮০৩ মেগাওয়াট, সিলেটে ৪৩২ মেগাওয়াট, খুলনা ২০৬০ মেগাওয়াট, বরিশালে ৬১৭২ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ২১৬৭ মেগাওয়াটসহ ১৮ হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন উদ্বৃত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা দিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ চাহিদা মিটবে। ফলে যে দশ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে তাতে তেমন প্রভাব পড়বে না।’
সার্বিকভাবে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা অনুসারে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অঞ্চলভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে উদ্বৃত বা ঘাটতি অর্থাৎ গ্রিড ব্যালেন্স পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো এলাকায় কি পরিমাণ দরকার সে অনুযায়ী নতুন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে।’
একইসাথে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬ অনুযায়ী মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৫ ভাগ হবে কয়লা থেকে, ৪৫ ভাগ গ্যাস ও এলএনজি থেকে। আর তরল জ্বালানি থেকে আসবে ১০ ভাগ। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে ১০ ভাগ। যদিও বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে তেল ও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎ ব্যবহারে এখনও কোনো খাত তৈরি করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। এই অবস্থায় আরও উৎপাদনের যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বেসরকারি আরও দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে বছরের শেষ নাগাদ আরও প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬০৫
আপনার মতামত জানানঃ