করোনা মহামারীর মধ্যেই হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে রাজধানীতে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮০ জনই ঢাকার। ঢাকায় এবছর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (১৬ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ১৭ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগী ৮১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় নতুন রোগী ৮০ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন রোগী ১ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৩৩৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে সর্বমোট ৩৩১ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পর দেশে মশাবাহিত রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যানে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যাক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ বছর আর কোনও মাসে এত রোগী পাওয়া যায়নি। শুধু জুলাই মাসেই এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭৬৭ জন। এদের মধ্যেই ৯৯ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩৩৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে ৩৩১ জন, আর বাকি পাঁচজন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৮০১ জন।
এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ছয় মাসে যত ডেঙ্গু রোগী জুলাইয়ের ১৭ দিনে তারচেয়েও বেশি
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছেন তার দ্বিগুণের রোগী আক্রান্ত হয়েছেন চলতি জুলাই মাসের ১৭ দিনেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয় জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন আর চলতি জুলাইয়ের ১৭ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৭ জন।
অর্থ্যাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩৭২ জন আর মধ্য জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৭ জন। যা কিনা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি।
জ্বর হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশ
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। এ অবস্থায় যেকোনো ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষারও নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গত ১২ জুলাই অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পর দেশে মশাবাহিত রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় জ্বর নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে এলেই তাকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষাও করতে হবে। এ বিষয়ে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন, তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
রোবেদ আমিন বলেন, সরকারের তরফ থেকে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু, দুটো পরীক্ষাই বিনামূল্যে করা হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের কাছেও আমাদের নির্দেশনা হলো; জ্বর হলেই এই দুটো পরীক্ষা অবশ্যই করাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক দিনের বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলতে পারে। বৃষ্টির জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পায় এবং লার্ভার ঘনত্ব বেড়ে যায়। লার্ভার ঘনত্বের কারণে কিছু কিছু এলাকা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নির্মাণাধীন ভবনের উন্মুক্ত পানির ট্যাংক, খালি কনটেইনারে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বালতি, বোতলে কিংবা কোনো পাত্রে পানি যেন জমতে না পারে এ জন্য কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের খেয়াল রাখতে হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ