তালিবানকে সাহায্য করছে পাকিস্তান, আফগান সরকারের এমন অভিযোগ নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে। স্পিন-বলদাক সীমান্ত দখলের পর এই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। এদিকে, ভূ-রাজনীতির সমীকরণে চীন-পাকিস্তানের তালিবানের পক্ষাবলম্বন লাভজনক হওয়ায় এই অভিযোগকে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এদিকে অস্ত্রবিরতি আর অভিযোগের মধ্যেই আফগানিস্তানের ১১৬ টি জেলার দখল নিয়েছে আফগানিস্তান।
তালিবানের পাশে পাকিস্তান
আফগানিস্তানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, তালিবানকে বিমান দিয়ে প্রকাশ্যে সহায়তা করছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ অভিযোগ করেন, স্পিন-বলদাক সীমান্ত দখলের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী তালিবানকে সহায়তা দিচ্ছে।
আমরুল্লাহ সালেহ বলেন, আফগান সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অফিসিয়ালি হুমকি দিয়েছে যে, তালিবানকে স্থানচ্যুত করতে চাইলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রতিহত করবে।
আফগান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা আরও অভিযোগ করছেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কিছু এলাকায় তালিবান যোদ্ধাদের বিমান দিয়ে সহায়তা করছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার
তবে শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী শুধুমাত্র পাকিস্তানের আকাশসীমা রক্ষার জন্য নিয়োজিত।
এর আগে গত বুধবার পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দরগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদারটি দখলে নেয় তালিবান যোদ্ধারা।
সীমান্ত ক্রসিং দখলে নেয়ার পর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করে তালিবান বাহিনী। এতে দেখা যায়, সীমান্তের পাকিস্তান-আফগানিস্তান ফ্রেন্ডশিপ গেইটের সামনে তালিবান যোদ্ধারা সাদা কাপড়ে কালো অক্ষরে লেখা পতাকা ওড়াচ্ছে।
এই ক্রসিংয়ের এক পাশে আফগানিস্তানের ওয়েশ শহর অন্যপাশে পাকিস্তানের চামান শহর অবস্থিত। স্পিন-বলদাক জেলার এই সীমান্ত ক্রসিংটি দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যের ধমনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিবিসির খবর অনুসারে, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই ঝড়ের গতিতে একের পর এক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে তালিবান। বহু আগে থেকে গুঞ্জন রয়েছে তালিবানকে সামরিকসহ বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে পাকিস্তান।
কী চাইছে পাকিস্তান?
কিন্তু আফগানিস্তানে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য কী, সেখানে পাকিস্তান আসলে কী চায়? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়ে লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির গবেষক এবং পাকিস্তান রাজনীতির বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তানের মূল কৌশলগত লক্ষ্যই হচ্ছে আফগানিস্তানে ভারতকে যতটা সম্ভব দুর্বল করে ফেলা, অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলা।
তার ভাষায়, ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণে ভারত যেন কোনো ভূমিকা না রাখতে পারে, সেটাই পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হাসিলে তালিবানই হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধান হাতিয়ার।
তালিবানের দখলে ১১৬ জেলা
এদিকে, আফগানিস্তানের ১১৬টি জেলা তালিবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে খোদ আফগান সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে আফগান সরকারের প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান ও তালিবানের সঙ্গে সরকারি আলোচক দলের সদস্য নাদের নাদেরি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশের ২৯টি প্রদেশের ১১৬টি জেলা বর্তমানে তালিবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব জেলার ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ তালিবান শাসনে বসবাস করছেন কিন্তু তারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
নাদেরি বলেন, তালিবানের হাতে এই ১১৬টি জেলার পতনের ফলে এসব জেলার সরকারি স্থাপনাগুলো ৫০ কোটি ডলার মূল্যের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
তালিবানের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ২৬০টি সরকারি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলেও জানান তিনি। নাদেরি বলেন, তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ১১২টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে আফগান এই কর্মকর্তা তালিবানের হাতে ১১৬টি জেলার পতনের কথা বললেও তালিবানরা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি আফগানিস্তানের অন্তত ২০০ জেলার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ