একের পর এক হামলা করে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালিবান যখন আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে, তখনই হঠাৎ তিন মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে তারা। আফগান সরকারের পক্ষের একজন মধ্যস্থতাকারীর বরাতে এএফপি এই খবর প্রকাশ করেছে। এদিকে, গতকাল পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং দখল করার পর আজ ৪০০ জনের মতো মানুষ জোর করে সীমান্ত পার হতে চাইলে সীমান্তে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
যদিও এর আগে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও রাজি হয়নি তালিবান। তালিবানের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের কথা জানিয়ে নাদের নাদেরি নামে আফগান সরকারের পক্ষের ওই মধ্যস্থতাকারী জানান, তালিবান তিন মাসের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব রেখেছে। তবে বিনিময়ে তাদের বন্দী থাকা সদস্যদের মুক্তি দেওয়ার শর্ত দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তালিবানের সাত হাজার সদস্য বিভিন্ন স্থানে বন্দী আছে। বন্দীদের মুক্তির পাশাপাশি জাতিসংঘের কালো তালিকা থেকে শীর্ষ নেতাদের নাম সরিয়ে দেওয়ার শর্তও দিয়েছে।
প্রায় ২০ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধের ইতি টানছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সব সেনা প্রত্যাহার করবে। এ লক্ষ্যে প্রায় সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদেশি সেনা চলে যাওয়ার মুখে সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে তালিবান। গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত-ক্রসিংগুলো তারা নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। আফগান সেনাদের থেকে দেশটির অন্তত ৮৫ শতাংশ অঞ্চল দখলের দাবি করছে তারা।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের চামান শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ঢোকার চেষ্টাকালে পাকিস্তান সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধবিরতি আর এই সংঘর্ষে তালিবানদের নতুন কোন পরিকল্পনার ইঙ্গিত থাকলেও থাকতে পারে।
এর আগে গতকাল পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং দখল করে তালিবান। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে তারা স্পিন-বলদাক সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পিন বলদাক সীমান্ত ক্রসিংটি ব্যবহার করে সরাসরি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে প্রবেশ করা যায়। তালিবানের অনেক শীর্ষ নেতা বেলুচিস্তানে কয়েক দশক ধরে ঘাঁটি গেড়েছেন। সেখানে তালিবানের বহু যোদ্ধাও বসবাস করে।
রয়টার্স বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী তালিবান যোদ্ধারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে থাকা আফগানিস্তানের সীমান্ত ক্রসিং ও চেক পোস্টগুলো দখলে নিচ্ছে। কারণ সীমান্ত ক্রসিং ও চেক পোস্টগুলো থেকে তাদের বড় অংকের রাজস্ব আদায় হবে, যার কোনোটিই আফগান সরকারের কোষাগারে যাবে না।
আফগানিস্তানে জোর করে প্রবেশ করার বিষয়ে চামান সীমান্তে দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ৪০০ জনের মতো মানুষ জোর করে সীমান্ত পার হতে চায়। বাধা দিতে গেলে তারা অবাধ্য হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের লাঠিপেটা করা হয়। তবে ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন চামানের এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১১৫
আপনার মতামত জানানঃ