দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাদণ্ড দেয়ার জের ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন পর্যন্ত ৭২। এদের মধ্যে ১০ জন পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সোয়েটো শহরের একটি শপিং সেন্টারে লুটপাটের সময়।
দেশটির রেস্তোরাঁ, শপিংমল, ব্লাড ব্যাংক, অ্যাম্বুলেন্সসহ রাস্তাঘাটের প্রতিটা জায়গায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভকারীরা নির্দয়ভাবে যেখানে-সেখানে লুটপাট চালাচ্ছে, আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।
দেশটিতে ক্ষতির পরিমান ইতিমধ্যেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে
সোমবার (১২ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত দুই শতাধিক শপিং মলে লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দেশটির ব্যবসায়ী নেতা বুসিসিয়ে মাভুসোর এই তথ্য দিয়েছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শহরাঞ্চল সোয়েটোতে বেশ কিছু শপিং সেন্টার পুরোপুরি লুটে নেয়া হয়েছে। এই শহরটিতেই নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি ছিল। শহরটির এটিএম বুথগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহল ও কাপড়ের দোকান সবকিছু ভেঙ্গে-চুরে ফেলা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার টাইমসলাইভ নিউজ সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়াজুলু-নাটাল শহরে গবাদিপশুও চুরি করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোর উপরও হামলা চালিয়েছে দাঙ্গাকারীরা। এমনকি সোমবার রাতে রামাফোসা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার সময় ডারবানের একটি ব্লাড ব্যাংকেও লুটপাট চালানো হয়।
পুলিশের সাথে মিলে সেনারা কিছু দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। দাঙ্গা উস্কে দেয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন ১২ জনকে চিহ্নিত করেছে তারা এবং এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা দাঙ্গাকারীদের তুলনায় এখনো নগণ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জুমাকে কারাবন্দী করার কারণ
গত মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের শাসনামলে দুর্নীতির তদন্তে অংশ নিতে না পারায় আদালত অবমাননার দায়ে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
৭৯ বছর বয়সী এই নেতা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করলে তাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন।
তার কারাদণ্ড সাংবিধানিক আদালত বাতিল কিংবা কমিয়ে দিবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন যে, এ সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী বেকি সেলে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘আমাদের জনগণের ব্যক্তিগত অবস্থা বা অসন্তোষ কখনোই তাদেরকে লুটপাট, ভাঙচুর এবং আইন ভাঙার বৈধতা দিতে পারে না।’
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলছেন, ১৯৯০ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার সাক্ষী হলো তার দেশ। প্রধান প্রধান শহর এবং বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি কুয়াজুলু-নাটাল এবং গাউতেং প্রদেশের ছোট ছোট শহরগুলোও।
মন্ত্রীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে ওইসব এলাকায় শিগগিরই প্রধান খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিবে। কিন্তু তারা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে অসম্মতি জানিয়েছেন।
দেশটিতে অস্বাভাবিক অবস্থা এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছেন সেখানকার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা। তবে এখনও জরুরি অবস্থা জারি করার পক্ষে না থাকলেও এরপরের পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবস্থা আরও খারাপ বুঝলে এ নিয়ে ভাববেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৪২
আপনার মতামত জানানঃ