ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে বিপর্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। বন্যার কারণে ইতিমধ্যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০০ জনে দাঁড়িয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এর মধ্যেই দেশটির বন্যাদুর্গত পূর্বাঞ্চলে গতকাল শনিবার আরও বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া দপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ পাসেলেতসো মোফোকেং বলেন, কেজেডএনের কিছু এলাকায় এখনো বৃষ্টিপাত চললেও তা গত কয়েক দিনের মতো তুমুল নয়। তবে স্থলভাগ পানিতে ভরে যাওয়ায় এখনো অনেক বন্যার আশঙ্কা আছে।
সপ্তাহের শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলীয় শহর ডারবানে বন্যা দেখা দেয়। শহরটির বিভিন্ন সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ওই বাড়িগুলোয় থাকা মানুষও পানিতে ভেসে গেছে।
এর মধ্যেই পূর্বাঞ্চলে আরও বেশি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। এমন অবস্থায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কোয়াজুলু-নাটাল (কেজেডএন) প্রদেশে জরুরি সেবা বিভাগকে উচ্চমাত্রার সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অনেকের শেষ সম্বলটুকু।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এ বন্যা ও ভূমিধসে শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের।
গত শুক্রবার প্রাদেশিক সরকার বলেছে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সীমিত রাখতে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলগুলোকে বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। এতে তারা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দ্রুত সহযোগিতা করতে পারবে।
সপ্তাহের শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলীয় শহর ডারবানে বন্যা দেখা দেয়। শহরটির বিভিন্ন সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ওই বাড়িগুলোয় থাকা মানুষও পানিতে ভেসে গেছে।
বন্যার কারণে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় চার হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন হল ও স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সেনা, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীরা ছোট একটি বেসামরিক বিমানবন্দর থেকে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিমানবন্দরটি সাধারণত উড়োজাহাজের মহড়া ও পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। উদ্ধার তৎপরতায় সমন্বয় করছেন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ডেভ স্টেয়িন। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।’
জরুরি সেবা প্রদানকারী কোম্পানি নেকেয়ার ৯১১-এর সদস্য শন হারবস্ট বলেন, দুঃখজনকভাবে এখনো বিভিন্ন বাড়িঘর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এখনো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
দেশটির উদ্ধারকর্মীরা জানান, বন্যা ও ভূমিধসে অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় নিখোঁজদের উদ্ধারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বৃষ্টির কারণে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। আর তাই এ উদ্ধার অভিযান শেষ করতে আমাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলমান এ দুর্যোগে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অঞ্চলটির ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি দেখা দেওয়ায় পানির ট্যাংক স্থাপনের অঙ্গীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। জরুরি ত্রাণ তহবিল হিসেবে সরকার ১০০ কোটি র্যান্ড (৬৮০ লাখ ডলার) ঘোষণা করেছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চার হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০৮
আপনার মতামত জানানঃ