পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে মামলাটি করেন মোঃ রহিম নামে ওই ব্যবসায়ী। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর এ বিষয়ে পরে আদেশ দেয়া হবে বলে জানান আদালত।
দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি হয়রানির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইয়াবা। পুলিশ কর্তৃক ক্ষুদ্রাকৃতির এই বড়ি সহজেই মানুষের শরীরের বিভিন্নস্থানে গুঁজে দিয়ে যে কাউকে ফাঁসানো এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে রাতে টহল পুলিশ সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে লোকজনকে হয়রানির মাধ্যমে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠছে হরহামেশা।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, চরকালিগঞ্জ জেলা পরিষদ মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ রহিম প্রতিদিনের মত গত ১২ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় মার্কেট থেকে কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আনুমানিক রাত ৮টায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া ব্রিজের ওপর অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তি নিজেদের ঢাকা জেলার ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার পথ আটকায় এবং রহিমের নামে তাদের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলে জানায়।
পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে একটি দোকানে নিয়ে তল্লাশি করে বেআইনি কিছু উদ্ধার করতে না পারায় সেখানে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন রহিমকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা সেই অনুরোধে কান না দিয়ে রহিমকে নিয়ে একটি সিএনজিতে করে সদরঘাট সংলগ্ন বাবু বাজার ব্রিজের কাছে যান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালী থানার এসআই আনিসুল ইসলাম, এএসআই খায়রুল ইসলাম ও সোর্স দেলোয়ার। তারা নিজেদের কাছ থেকে ৬৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট বের করে রহিমকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখায়। পাশাপাশি সাজানো মামলা থেকে বাঁচতে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন রহিম বাঁচার জন্য নিজের কাছে থাকা নগদ ১৩ হাজার টাকা এবং এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন তাদের দেয়।
দাবিকৃত দুই লাখ টাকা দিতে না পারায় তারা রহিমকে রাত সোয়া ৯টার দিকে থানায় নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আরো ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের হাতে দেন। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে থানার ওসি মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী রহিমকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন এবং বলেন, তার বিরুদ্ধে ছোট মামলা দেওয়া হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যেই বের হয়ে আসতে পারবে।
ব্যবসায়ী রহিমের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র থেকে আরো জানা যায়, ওই সময় রহিমকে একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং তার কাছ থেকে ১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মামলায় রহিমকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায় আদালত। মোট ১৭ দিন কারাভোগের পর গত ৩০ অক্টোবর তিনি মুক্তি পান।
ব্যবসায়ী রহিম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খায়রুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম এবং পুলিশের সোর্স দেলোয়ার হোসেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের মতো একটি বড় বাহিনীতে নানা ধরনের মানসিকতার লোক থাকবে, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বাহিনীর শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়াতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। পুলিশের মত বাহিনীকে সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করতে হয়, এ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনে অভ্যস্থ করে তুলতে হলে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে যথাযথ তদন্ত করে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। না হয় বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে, পুরো বাহিনী অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠবে এবং সাধারণ মানুষের বাহিনীর প্রতি আস্থার সঙ্কট তৈরি হবে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুলিশের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এ বাহিনীর মধ্যে অপরাধ ও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বেড়েই চলছে।
ফাআ/নসদ/২১৪০
আপনার মতামত জানানঃ