এবার আফগানিস্তানে মৌলবাদী শক্তি তালিবানদের রুখে দিতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছেন নারীরা। এমনকি দেশটির উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অস্ত্র হাতে রাস্তায় তালিবানবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন তারা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকশ’ নারী অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
সূত্র মতে, তালিবানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় লড়াই করছে আফগান সেনারা। পাশাপাশি সপ্তাহের শেষ দিকে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ঘোর প্রদেশে নারীদের বড় ধরনের একটি বিক্ষোভ হয়। সেখানে কয়েকশ’ নারী অস্ত্র উঁচিয়ে তালিবানবিরোধী স্লোগান দেন।
সরাসরি যুদ্ধ করতে চায় অনেকেই
গার্ডিয়ান বলছে, বিক্ষোভে অংশ নিলেও বিপুলসংখ্যক নারী এখনই সরাসরি তালিবান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে পারবেন না। সামাজিক রক্ষণশীলতা ও অভিজ্ঞতার অভাব তাদের পিছিয়ে রাখবে। তবে তালিবান মৌলবাদী হুমকির মুখে প্রকাশ্য বিক্ষোভ করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আফগান নারী ও তাদের পরিবারের জন্য তালিবান শাসন কতটা ভীতিকর ছিল।
যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত থাকা নারীদের মধ্যে হালিমা নিজেও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমিসহ কয়েকজন নারী এক মাস আগে গভর্নরকে জানিয়েছি, আমরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।’
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ঘোরের মহিলা অধিদপ্তরের প্রধান হালিমা পারাশতিস বলেন, ‘কিছু নারী আছেন, যারা প্রতীকী অর্থে শুধু নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুপ্রেরণা দিতে চান। কিন্তু কিছু নারী আছেন, যারা সত্যিকারে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে প্রস্তুত।’
যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত থাকা নারীদের মধ্যে হালিমা নিজেও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমিসহ কয়েকজন নারী এক মাস আগে গভর্নরকে জানিয়েছি, আমরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।’
কেন অস্ত্র হাতে নিচ্ছে আফগান নারীরা?
প্রসঙ্গত, দুই দশকের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়তে থাকায় দেশটিতে একের পর এক অঞ্চল দখলে নিচ্ছে তালিবান। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে তালিবানের একটি প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের ৩৯৮টি জেলার মধ্যে ২৫০টি জেলা তারা দখলে নিয়েছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে আফগান নারীদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে আবারও মৌলবাদীদের শাসনে অবরুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কাকেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিবানরা আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েক ডজন গুরুত্বপূর্ণ জেলাও রয়েছে। এসব জায়গার মধ্যে একসময় তালিবানবিরোধী অনেক জায়গাও রয়েছে। তাদের দখলে কয়েকটি প্রদেশের রাজধানীও রয়েছে।
দেশটিতে নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারের নারীরাও আরও শিক্ষা, চলাফেরায় স্বাধীনতা ও পরিবারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে চান। তালিবানের শাসন তাদের উল্টো পথেই নিয়ে যাবে।
তালিবানরা যেসব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, সেগুলোতে ইতিমধ্যে নারীসহ ওই এলাকার জনগণের শিক্ষা, চলাচল, পোশাক, কার্যক্রমে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। একটি এলাকায় নারীদের বোরকা পরে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।
দেশটিতে নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারের নারীরাও আরও শিক্ষা, চলাফেরায় স্বাধীনতা ও পরিবারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে চান। তালিবানের শাসন তাদের উল্টো পথেই নিয়ে যাবে।
উত্তর জোজজান এলাকার এক নারী সাংবাদিক বলেন, কোনো নারীই যুদ্ধ চায় না। আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এবং সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাই। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আমাকে ও অন্য নারীদের প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য করছে।
অস্ত্র চালনার জন্য সেখানকার প্রাদেশিক রাজধানীতে একদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। ওই নারী সাংবাদিক বলেন, ‘আমি চাই না দেশ এমন লোকদের অধীনে যাক, যারা নারীদের সঙ্গে তদের ইচ্ছা অনুযায়ী আচরণ করবে। আমরা অস্ত্র তুলে নিয়েছি, যাতে প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে পারি।
নারীরা অভিজ্ঞতা কম থাকলেও তালিবানের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ যোদ্ধাদের তুলনায় একটি বাড়তি সুবিধা তারা পাবেন। তালিবানরা নারীদের হাতে নিহত হতে ভয় পায়। তারা একে লজ্জার মনে করে। রক্ষণশীল তালিবানরা নারীর মুখোমুখি হয়ে লড়াইয়ের বিষয়টিকে অপমানজনক মনে করে। এর আগে সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধারা নারী কুর্দি সেনাদের হাতে নিহত হওয়ার ভয়ে থাকতেন।
২০ বছর বয়সী ওই নারী সাংবাদিক বলেন, তার সঙ্গে আরও কয়েক ডজন নারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের অভিজ্ঞতা কম থাকলেও তালিবানের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ যোদ্ধাদের তুলনায় একটি বাড়তি সুবিধা তারা পাবেন। তালিবানরা নারীদের হাতে নিহত হতে ভয় পায়। তারা একে লজ্জার মনে করে। রক্ষণশীল তালিবানরা নারীর মুখোমুখি হয়ে লড়াইয়ের বিষয়টিকে অপমানজনক মনে করে। এর আগে সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধারা নারী কুর্দি সেনাদের হাতে নিহত হওয়ার ভয়ে থাকতেন।
লড়াই নতুন নয় আফগান নারীদের
আফগান নারীদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার ঘটনা বিরল, তবে নজিরবিহীন নয়, বিশেষত দেশটির কম রক্ষণশীল অংশে। গত বছর কামার গুল নামের এক তরুণী তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তালিবানরা তার মা-বাবাকে হত্যা করেছিল।
বাঘলান প্রদেশে বিবি আয়শা হাবিবি নামের এক নারী সোভিয়েত আক্রমণের মুখে লড়াই করে দেশটির প্রথম নারী যোদ্ধার খ্যাতি পান। তিনি কমান্ডার কাফতার বা পিজিয়ন নামেও পরিচিত ছিলেন। দেশটির উত্তরে বালখ এলাকায় ৩৯ বছর বয়সী সালিমা মাজারি সম্প্রতি দেশটির চারকিনতে সম্মুখ লড়াইয়ে অংশ নেন।
দুই দশক ধরে আফগান নারীরা নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, যার মধ্যে হেলিকপ্টারের পাইলটের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়ও রয়েছে। তবে তারা বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকারও হন। তাদের সম্মুখে খুব কম দেখা যায়।
কী ভাবছে তালিবানরা?
তালিবানের পক্ষ থেকে দেশটির নারীদের এই বিক্ষোভকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, এই বিক্ষোভের বিষয়টি অপপ্রচার এবং পুরুষ আত্মীয়রা নারীদের লড়াই করতে দেবে না। তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লা মুজাহিদ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নারীরা কখনো অস্ত্র ধরবে না। তারা অসহায় এবং আমাদের পরাজিত শত্রুরা তাদের জোর করে এটা করতে বাধ্য করছে। তারা লড়াই করতে পারবে না।’
অপর দিকে ঘোরের গভর্নর আবদুলজহির ফাইজজাদা বলেন, ফিরোজকোহের রাস্তায় যেসব নারী নেমে এসেছিলেন, তারা ইতিমধ্যে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়েছেন। বেশির ভাগই তালিবানের সহিংসতা পার করে এসেছেন। অধিকাংশ নারী তালিবান অধ্যুষিত এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন। তাদের গ্রামে তারা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গেছেন। হারিয়েছেন সন্তান বা ভাই। তারা ক্ষুব্ধ।
ফাইজজাদা আরও বলেন, কাবুল সরকার যদি অনুমোদন দেয়, তবে অনভিজ্ঞ নারীদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেবেন তিনি। এদিকে, ঘোরের মহিলা অধিদপ্তরের প্রধান হালিমা পারাশতিস বলেন, এখানে তালিবানের রক্ষণশীল শাসনকে স্বাগত জানানো হবে না। এখানে নারীরা বোরকার বদলে স্কার্ফ পরেন এবং মাঠে পুরুষের পাশাপাশি কাজে অংশ নেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫২
আপনার মতামত জানানঃ