গত বছরের (২০২০ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ৪০২ জন পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশই শিশু এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা বিভাগে।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’র তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সমষ্টি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৮৭৫টি ঘটনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে এক হাজার ৪০২ জন মারা যান। যার মধ্যে রয়েছে এক হাজার ১৬৪ জন শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশই শিশু। চার বছর বা কম বয়সী ৫১৪ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৪৪৮ জন, ৯ থেকে ১৪ বছরের ১৫৭ জন এবং ১৫ থেকে ১৮ বছরের ৪৫ জন। ২৩৮ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে, ৩২২ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৬৭ জন, রংপুরে ১৮৭, রাজশাহীতে ১৮৩, ময়মনসিংহে ১৪৩, বরিশালে ১২৩ ও খুলনা বিভাগে ১০৯ জন মারা যায়। এ সময় সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৬৮ জন।
নেত্রকোনা জেলায় গত ১৮ মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, ৬৬ জন। পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে ঢাকা, নোয়াখালী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা। এসব জেলায় যথাক্রমে ৫৯, ৫৪, ৫০, ৪২ ও ৩৯ জন মারা যায়। বান্দরবান, শরীয়তপুর ও নড়াইল-এ তিনটি জেলায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫৮৮ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৫৪৫ জন মারা যায়। এছাড়া সন্ধ্যায় ২৩৫ জন মারা যায়। ২২ জন রাতের বেলায় পানিতে ডোবে। ১২ জনের মৃত্যুর সময় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নিশ্চিত হয় যায়নি।
একাধিক স্বজন হারিয়েছে ৯৭ পরিবার
এ সময় ৯৭টি পরিবারের ২৩৮ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই বা বোনসহ ১১৮ জন, বাবা-মাসহ ১৯ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ চারজন, চাচাত বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৮১ জন, চাচা-খালাসহ ১৭ জন মারা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ৫০৬ জন নারী। এদের মধ্যে কন্যা শিশু ৪৫০ জন। পুরুষ মারা যায় ৮৯০ জন, যাদের মধ্যে ৭০৮ জন শিশু। প্রকাশিত সংবাদ থেকে ছয়জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।
নৌযান দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০২০ এর ২৯ জুন। বুড়িগঙ্গা নদীতে এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে ৩২ জন মারা যায়। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকাডুবে ১৭ জন মারা যায়।
পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং: অ্যানইমপ্লিমেন্টেশন গাইডে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবা যত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করার উপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ডইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এ রিপোর্ট অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েল্থ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কোনো তথ্যব্যবস্থা না থাকায় এর প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২০২
আপনার মতামত জানানঃ