তালিবানের জন্য চীন পাকিস্তানের সাথে শত্রুতা এড়িয়ে যাওয়া নানাভাবেই সুবিধাজনক। ক্ষমতা পেলে দেশের পুনর্গঠনে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সহায়তার উৎস প্রয়োজন তাদের। এদিকে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখেছে চীন। তারপর পাকিস্তান, যদিও কিছু ঝুঁকি আছে ইসলামাবাদেরও। তবে ক্ষতির পাল্লা ভারী হচ্ছে ভারতের। তাই ঝুঁকি নিতে পিছপা হবে না পাকিস্তান, এটাই স্বাভাবিক। তালিবান নিয়ন্ত্রিত অবস্থাতেই আফগানিস্তানকে নিজেদের দিকে টানতে চায় চীন। তাহলে চীন পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান তার অর্থনৈতিক করিডরে আফগানিস্তানকেও যুক্ত করতে পারবে বলে আশা করছে।
তালিবান-বেইজিং এই সমীকরণ সফল হলে পাকিস্তান লাভবান হবে। এই অঞ্চলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বাড়বে। এছড়া সবসময়ই আফগানিস্তান পাকিস্তানের জন্য বড়সড়ো বাজার। এসব মিলিয়ে আমেরিকার দেশে ফেরা থেকে চীন ও পাকিস্তানই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে আশাবাদী অবস্থায় আছে। বালুচিস্তান থেকে কান্দাহার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়তে চায় তারা তালিবানকে সঙ্গে নিয়ে। এই জোট দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিকাঠামোকে একেবারে গোড়া থেকে নাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
টিটিপি অবশ্যই নিজ দেশে একইভাবে ক্ষমতাশালী হতে চাইবে। দেশটির আফগান সীমান্তবর্তী ট্রাইবাল এলাকায় তাদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে এখনই। এ ছাড়া পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে দেশের তালিবানের মোকাবিলায় নৈতিক সাহসের সংকট অনেক পুরনো। পাশের দেশে তালিবানের মদদ দিয়ে নিজ দেশে একই আদর্শের কর্মীদের গুলি চালানোর ন্যায্যতা খুঁজে পাওয়া তাই ইসলামাবাদের জন্য সহজ হবে না।
তবে পাকিস্তানের জন্য নীরব এক বিপদও হয়তো অপেক্ষা করছে। আফগানিস্তানে তালিবানদের শক্তিশালী অবস্থান তাদের দেশে অনুরূপ রাজনৈতিক শক্তির জন্য উত্থানের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর তা হলে, পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বড়সড় ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তালিবানের পাকিস্তানি শাখা হলো তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি। এদের প্রায় পাঁচ হাজার সশস্ত্র কর্মী আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে আছে। কাবুল তালিবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া মানে টিটিপির জন্য আফগানিস্তান নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা। যা পাকিস্তানের জন্য মাথাব্যথার হয়ে উঠবে।
কারণ টিটিপি অবশ্যই নিজ দেশে একইভাবে ক্ষমতাশালী হতে চাইবে। দেশটির আফগান সীমান্তবর্তী ট্রাইবাল এলাকায় তাদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে এখনই। এ ছাড়া পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে দেশের তালিবানের মোকাবিলায় নৈতিক সাহসের সংকট অনেক পুরনো। পাশের দেশে তালিবানের মদদ দিয়ে নিজ দেশে একই আদর্শের কর্মীদের গুলি চালানোর ন্যায্যতা খুঁজে পাওয়া তাই ইসলামাবাদের জন্য সহজ হবে না।
পাকিস্তান বড় এক জুয়া খেলায় বসেছে এবার। চীন-পাকিস্তানের ৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডরে আফগানিস্তানকে সঙ্গে পেলে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। চীন-পাকিস্তানের ৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডরে আফগানিস্তানকে সঙ্গে পেলে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে তারা। আবার চীন-রাশিয়ার স্বীকৃতি পেলে আফগান তালিবানের পাকিস্তান নির্ভরতা অনেক কমে যাবে। তখন টিটিপিকে আরেকটি আফগানিস্তান জন্ম দেয়ার পদক্ষেপ নিতে ইঙ্গিত দিতে দেরি করবে না তালিবান।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর ওপর প্রায়ই হামলা হয় এবং আসন্ন দিনগুলোতে এটা বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানের জন্য আরেক বিপদের দিক হলো, তালিবান রাজত্বে যদি শান্তি না আসে, তাহলে লাখ লাখ আফগান শরণার্থীর দেশে ফেরাও অনিশ্চিত থাকবে। সব মিলে আফগানিস্তানে তালিবানকে মদদ দিয়ে পাকিস্তান নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে কি না, সেটা এখন বিশাল এক প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তান কতটা চিন্তিত এইমুহূর্তে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত আছে।
কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পাকিস্তান বড় এক জুয়া খেলায় বসেছে এবার। চীন-পাকিস্তানের ৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডরে আফগানিস্তানকে সঙ্গে পেলে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। আবার চীন-রাশিয়ার স্বীকৃতি পেলে আফগান তালিবানের পাকিস্তান-নির্ভরতা অনেক কমে যাবে। তখন টিটিপিকে আরেকটি আফগানিস্তান জন্ম দেয়ার পদক্ষেপ নিতে ইঙ্গিত দিতে দেরি করবে না তালিবান।
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতময় সম্পর্ক এবং কাশ্মীর সংকটের কারণে আফগানিস্তানের ভূরাজনীতিতে ভারতও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। এজন্য ভারত ইতিমধ্যে আফগানিস্তানকে দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন স্থানে কনস্যুলেট খুলেছে। আফগান পুলিশ, সামরিক ও গোয়েন্দা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তবে অবশ্যই আদর্শ বা মানবিক জায়গা থেকে ভারত আফগানিস্তানকে সহায়তা করেনি। বরং কাবুলে ইসলামাবাদের প্রভাব হ্রাসের জন্য নয়াদিল্লির সহায়তা বাড়িয়েছে। স্বভাবতই তালিবানরা বরাবরই আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতিকে মেনে নেয়নি। আফগানিস্তানে ভারতের বেসামরিক অপারেশন নির্বিঘ্ন ছিল না মোটেও।
আফগানিস্তানে ভারতের যারা ঐতিহাসিক মিত্রশক্তি, সেই তাজিক ও উজবেকদের দুর্বল দশা নয়াদিল্লির জন্য একটা খারাপ বার্তা। তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্যও ভারতের শঙ্কার কারণ হতে পারে। আফগান মুজাহিদরা আমেরিকাকে পরাজিত করার উদ্দীপনায় কাশ্মীরের দিকেও নজর দিতে পারেন এবং তাতে পাকিস্তানের নীরব সায় থাকারও ভয় করছে নয়াদিল্লি।
আফগানিস্তানে যদি আবার তালিবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসে বা ক্ষমতার ভাগ পায়, তবে তা হবে ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। পাকিস্তানিও তখন কাশ্মীরের দিকে মন দিতে সক্ষম হবে, যেহেতু তার পেছনে থাকবে আফগান সমর্থন ও লোকবল।
তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতের। স্বাভাবিকভাবেই আশপাশের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আসন্ন আফগানিস্তান নিয়ে বেশি দুর্ভাবনায় আছে ভারত। দুই দশকে ন্যাটোর দূরবর্তী মিত্র হিসেবে দেশটিতে তারা যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে, তার পুরোটা পানিতে ধুয়েমুছে যেতে চলছে। ভারত তালিবানের তরফ থেকে প্রতিশোধের এত বেশি শঙ্কা করছে যে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
আফগান পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত মোড় পরিবর্তনে ভারতের আফগান-নীতিও আমূল বদলে গেছে। তালিবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছে তাদের কূটনীতিকেরা।
আফগানিস্তানে ভারতের যারা ঐতিহাসিক মিত্রশক্তি, সেই তাজিক ও উজবেকদের দুর্বল দশা নয়াদিল্লির জন্য একটা খারাপ বার্তা। তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্যও ভারতের শঙ্কার কারণ হতে পারে। আফগান মুজাহিদরা আমেরিকাকে পরাজিত করার উদ্দীপনায় কাশ্মীরের দিকেও নজর দিতে পারেন এবং তাতে পাকিস্তানের নীরব সায় থাকারও ভয় করছে নয়াদিল্লি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৩২
আপনার মতামত জানানঃ