সাধারণ জনগনের থেকে ট্যাক্স আরোপ করে উর্পাজন করা টাকা, হাতের ময়লার মত সরকারি কর্মকতাদের বিলাসিতার পেছনে উড়ানোয় লাগাম টানা হলো কিছুকালের জন্য। করোনা দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিধ্বস্ত হবার আগেও এই দেশের হতদরিদ্রের খেয়ে না খেয়েই দিন কাটতো। অথচ দেশের ক্ষুধার্ত গোষ্ঠীকে অগ্রাহ্য করে সরকারি কর্মকতাদের বিদেশ ভ্রমনের জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো
২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের খরচ মেটানোর জন্য সরকার ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলো। তবে করোনার কারণে ভ্রমণ বন্ধ থাকলে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আর খরচ করা সম্ভব হয়নি। তাই বেঁচে গিয়েছিলো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন কেনাকাটা খাতে বরাদ্দ ছিলো ৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এখন তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হলো।
বাজেট কমানোর কারণ
করোনার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বৈঠক-সম্মেলন থেকে শুরু করে সবকিছু এখন বন্ধ। কোথাও কোনো সেমিনার বা প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, তথা বিমান চলাচল আজ সীমিত পরিসরে চলছে, কাল আবার বন্ধ। এ কারণে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ সরকারি কর্মচারীদের পেছনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ খরচ কমেছে। চাইলেও তারা এখন বিদেশ যেতে পারছেন না। ব্যতিক্রম ছাড়া মন্ত্রী, সাংসদদেরও বিদেশ ভ্রমণে লাগাম টানতে হচ্ছে।
এজন্য সরকারিভাবে ভ্রমণের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে ৫০ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে ভ্রমণ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ খরচ করা যাবে। সব ধরনের নিয়মিত ভ্রমণও পরিহার করতে হবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
সরকারী কর্মকর্তাদের ভ্রমণের পেছনে খরচের পরিমাণ
ভ্রমণ খরচের ক্ষেত্রে গন্তব্যের দেশগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। আর সরকারের ঊর্ধ্বতনরা তাদের পদমর্যাদা অনুসারে ভ্রমণ ভাতা পেয়ে থাকেন। এক নম্বর গ্রুপের দেশগুলো হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ। দুই নম্বর গ্রুপে আছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো। আর এশিয়ার দেশগুলো আছে তিন নম্বর গ্রুপে।
গত বছর অর্থনৈতিক বিভাগের একটি পরিপত্র অনুসারে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশি মিশনগুলোতে কর্মরত রাষ্ট্রদূতরা তাদের ‘বিশেষ স্ট্যাটাস’ অনুযায়ী হোটেল খরচ হিসেবে দৈনিক ২৩০ থেকে ৫৬০ ডলার পর্যন্ত ভাতা পান।
এ ছাড়া খাবার, বকশিশ ও যাতায়াতের জন্য তাদের দৈনিক ৮৭ থেকে ১২৭ ডলার পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হয়।
এদিকে জেনারেল বা সাধারণ স্ট্যাটাসের আওতাধীন কর্মকর্তাদের হোটেল খরচের জন্য বরাদ্দ থাকে ১১৬ ডলার থেকে ২৮০ ডলার। অন্যান্য খরচ নির্বাহের জন্য তাদের ৬৪ ডলার থেকে ১০১ ডলার করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রীরা বিনোদনের জন্য ৭০০ ডলার এবং প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা ৬০০ ডলার করে খরচ করতে পারেন। অন্যদিকে কেবিনেট সচিব, মূখ্যসচিব, জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব ও সম পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তাদের এ বাবদ ৫০০ ডলার পর্যন্ত খরচের অনুমোদন আছে।
যানবাহন সংক্রান্ত বাজেট
যানবাহন ক্রয়সংক্রান্ত অন্য পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় যানবাহন কেনা বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে খরচ কমানো হয়েছে ৫০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন কেনাকাটা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গাড়ি কেনা বাবদ চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা স্থগিত থাকছে। অর্থাৎ, এ টাকা খরচ করা যাবে না।
বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্রের জন্য এই বাজেট শ্রমিকের মুখের ভাত কেড়ে খাওয়ার মত বর্বর। দেশের প্রতিটা সেক্টরে দূর্নীতির তুমুল প্রভাব। তো, এই টাকাগুলো যে গরীবের হক মেরে ধনীদের আরও ধনী হবার চেষ্টায় পাওয়া টাকা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। করোনার কারণে এই বাজেট শিথিল করার অনেক আগেই এটি শিথিল করা প্রয়োজন ছিলো।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩০০
আপনার মতামত জানানঃ