বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন যেনো ব্যাঙের সর্দি। এই কট্টরতম ফ্যাসিজম থেকে সাংবাদিকতার মত গুরুত্বপূর্ণ পেশারও রক্ষা নেই। সাংবাদিকদের মত প্রকাশও সরকার নিয়ন্ত্রিত বলে গোড়ায় গন্ডগলের অনেক কিছুই পৌছায় না সাধারণ জনগন অব্দি। ঝিনাইদহে সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেয়া এই ফ্যাসিজমেরই দৃষ্টান্ত।
গতকাল রোববার (৪ জুলাই) ঝিনাইদহে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মিরাজ জামান রাজ নামে দুই সাংবাদিক। মাসুদ হলেন অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘জাগোনিউজ.কম’ এর ঝিনাইদহ প্রতিনিধি এবং মিরাজ স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘দুরন্ত প্রকাশ’ এর সম্পাদক। তারা তাদের দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। খানজাহান আলী নামের এক কনস্টেবল তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং পরে তা ফেরত দেন। দুপুর দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পাগলা কানাই মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
হেনস্তার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের মন্তব্য
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি স্কাউট সদস্যরাও কাজ করছেন। রোববার দুপুরে স্কাউট সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য পাগলা কানাই মোড়ে যাই। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের অনুমতি নিয়ে এক স্কাউট সদস্যের বক্তব্য নেয়া শুরু করি।’
‘এসময় কনস্টেবল খানজাহান আলী হঠাৎ উপস্থিত হয়ে বলেন—‘পুলিশের কোনো ভিডিও নেয়া যাবে না’।
এ বক্তব্য নেয়ার আগে পুলিশকে জানানো হয়েছে, তাছাড়া এখানে তো পুলিশের কারও বক্তব্য নেয়া হচ্ছে না, বরং স্কাউট সদস্যদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে— এ কথা বলতেই খানজাহান আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এসময় আমার সঙ্গে থাকা অপর সাংবাদিকের (মিরাজ জামান) মোবাইল ফোনও কেড়ে নেন তিনি। দুজনের ফোনেরই ভিডিও ফাইল ডিলিট করতে থাকেন খানজাহান। বলতে থাকেন, ‘কীসের সাংবাদিক!’
এসময় আমরা প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘কীসের প্রেসক্লাব?’ এছাড়া সাংবাদিকদের বিষয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন তিনি।
ঘটনাস্থলে আরও উপস্থিত ছিলেন কনস্টেবল আবু বকর, খান বাহাদুর রাকিব ও অর্ণব। অবশ্য উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাকিম ঘটনাস্থলের দায়িত্বে থাকলেও তিনি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না’— বলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
সাংবাদিক মিরাজ জামান রাজ বলেন, ‘পাগলা কানাই মোড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবল খানজাহান আলী হঠাৎ আমাদের হাতের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এরপর বলেন, ‘আপনারা কীসের সাংবাদিক!’ প্রেসক্লাবের সদস্য বললে তিনি বলেন, ‘কীসের প্রেসক্লাব! যা পারেন করেন দেখি কী করতে পারেন’।’
ঘটনাটির প্রেক্ষিতে নেয়া পদক্ষেপ
ঘটনার পরপরই বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতিকে অবহিত করেন দুই সাংবাদিক। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন দুই সাংবাদিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (এসপি) মুনতাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঘটে। জাগো নিউজের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানান এবং জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও ফোন করেছিলেন। ওই সাংবাদিক ছবি তুলছিলেন আর কনস্টেবল মনে করছেন জিজ্ঞেস না করেই ছবি তোলা হচ্ছে। এ সময় কনস্টেবল সাংবাদিকের মোবাইলটি কেড়ে নেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর এবং প্রেসক্লাবের সিনিয়ররা আসার পর কনস্টেবল মোবাইলটি ফেরত দেন।’
কনস্টেবলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘কনস্টেবলকে ডাকা হয়েছে। তার বক্তব্য শুনব এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এই সংকটের মুহূর্তে মাঠে আমরা পুলিশ-সাংবাদিক একসঙ্গে কাজ করি যারা, সবাই খুব প্রেশারে আছি।’
এসপি আরও বলেন, ‘ওই কনস্টেবল থানার নন, তিনি পুলিশ লাইনের ফোর্স। করোনার কারণে তাকে মাঠে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি মাত্রই পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন। থানা পুলিশের যারা মাঠে কাজ করেন, তারা সাংবাদিকদের বিষয়টি বুঝতে পারেন।’
অন্যদিকে, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ঝিনুক’ এর সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন, কনস্টেবল খানজাহান আলীর দ্বারা দুই সাংবাদিকের হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান টিপু বলেছেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মিরাজ জামান রাজ কর্মরত অবস্থায় পুলিশ সদস্য কর্তৃক যে হয়রানির শিকার হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমি। ঘটনাটি জানামাত্রই আমি পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবহিত করি এবং এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কনস্টেবল খানজাহান আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/১২২৯
আপনার মতামত জানানঃ