প্রশাসনিক অদক্ষতায় একের পর এক মাইলস্টোন ছুঁচ্ছে সরকার। মেগা প্রকল্পে অর্থ কেলেঙ্কারি, ৫ বছরের প্রকল্প ১৫ বছরেও শেষ করতে না পারা কিংবা সুঁই বা পর্দার দাম নিয়ে জোচ্চুরির শেষ নেই এই প্রশাসনের। তবে এসবকিছুতেই ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। সরকারের নতুন ব্যর্থতার ট্রফি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সংকট।
পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন
২০২২ এবং ২০২৩ সালে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক কোটি ৩৪ লাখ ঘনফুট গ্যাস লাগবে। যার সংস্থান কীভাবে হবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। তাই সরকারের নতুন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জ্বালানি সরবরাহ।
“না বুঝে এতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনও জবাব দিতে পারেননি।”
সূত্র মতে, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসায় ২০১৯ সালে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করে পিডিবি। অথচ এখানেও জ্বালানি সংকটে কাণ্ডজ্ঞানহীন সরকার।
দৈনিক কত ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন?
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, রিল্যায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করে। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট থেকে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা। করোনার কারণে কেন্দ্রের নির্মাণ অগ্রগতি থমকে থাকলেও গত ৩০ জুলাই রিল্যায়েন্সের তরফ থেকে কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
মেঘনাঘাটে ৭১৮ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির জন্য দিনে ১০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২ কোটি ঘনফুট হারে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। শুরুতে রিল্যায়েন্সের তরফ থেকে জানানো হয়, তারা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে নিজেরাই গ্যাস আমদানি করবে। কিন্তু পরে পেট্রোবাংলাই তাদের গ্যাসের নিশ্চয়তা দেয়।
সামিট মেঘনাঘাট-২ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ চুক্তি সই হয়। সামিটের ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা আগামী মার্চে। কেন্দ্রটির জন্য গ্যাসের প্রয়োজন দৈনিক ৩ কোটি ঘনফুট।
ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৫৮৪ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি হয় ২০১৯ সালের ৭ জুলাই। আগামী বছর ২৩ জুলাই কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা। এখানেও দিনে গ্যাসের প্রয়োজন ২ কোটি ৯২ লাখ ঘনফুট। যদিও এই কোম্পানি এখনও এই কেন্দ্রের অর্থায়ন নিশ্চিত করার খবর জানাতে পারেনি।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। একই বছর আগস্টে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। ইতোমধ্যে খুলনাতে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটিও আমদানি করা গ্যাসে চালানোর কথা। হিসাব অনুযায়ী এখানে দিনে ৪ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন।
ঘাটতি কতটা?
প্রয়োজনের শেষ নেই। কিন্তু যোগানেই আছে। দৈনিক যে হারে গ্যাস প্রয়োজন, এত গ্যাস কোথা থেকে আসবে তা জানা নেই প্রশাসনের। পরিকল্পনাহীন উন্নয়নে কাঁধ ঝুঁকে যাচ্ছে দেশের। এখন দেশে দিনে ৯০ কোটি ঘনফুট এলএনজি গ্যাস গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশে যে এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ একশ’ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সম্ভব। কিন্তু বিশ্বের কোথাও এলএনজি টার্মিনাল সক্ষমতার ৭০ ভাগের বেশি এলএনজি সরবরাহ করে না।
এ কারণেই আগামী ২ বছরে ১৩ কোটি ৪ লাখ ঘনফুট বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণ নিয়ে চিন্তিত সরকার।
সূত্র মতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ দুরূহ বলে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে যোগ দেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে না বুঝে এতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনও জবাব দিতে পারেননি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২৮২০
আপনার মতামত জানানঃ