করোনাভাইরাসে প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবীরের পরিবার ভয়াবহ অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে পরিবারটির অসহায়ত্ব। মৃত সাংবাদিকের পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তাই তার বড় কন্যা সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনভিজ্ঞতা ও পড়াশোনার জন্য তার পক্ষে পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে কতদিন চলবে জানে না পরিবারের সদস্যরা।
প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা রীনা জানান, তিন সন্তানের লেখাপড়া ও বাসাভাড়াসহ সংসারের খরচ চালানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। বড় মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি সুপার শপে চাকরি করছে। সেই চাকরির টাকা ও সহায়তার টাকা ভেঙে চলছে সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। জানি না কতদিন এভাবে চলবে। আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে এতিম এই সন্তানগুলোর লেখাপড়া অব্যাহত রেখে সংসারটা চালিয়ে নিতে পারতাম। না হলে বাসা ছেড়ে দিয়ে হয়তো গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হবে। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
২৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকন মারা যান। তিনি ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ছিলেন। তিনি দৈনিক আমাদের সময় ও আমাদের অর্থনীতির প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা রীনা একজন কবি। বড় মেয়ে মেহজাবিন বাঁধন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিক্সে মাস্টার্স করছেন। একই ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স করছেন ছেলে আশরাফুল হক আবীর। আর সাউথ পয়েন্ট স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে ছোট মেয়ে মেহরিন নাফিসা। তাদের নিয়েই মহাখালীর ছোট্ট একটি বাসায় এখন ভাড়া থাকছেন রীনা।
খোকনের অনুপস্থিতিতে কীভাবে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়া চলছে তা জানতে চাইলে শারমিন সুলতানা বলেন, খোকন এভাবে হঠাৎ চলে যাবেন, তা আমরা কেউ ভাবিনি। খোকনের মৃত্যুর পর পরিবারের প্রায় সবাই হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলাম। তখন আমাদের অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। সময়ের আলো পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে। আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওই সময় সাংবাদিক নেতারা সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, তথ্যমন্ত্রী মহোদয় পাশে থাকবেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) একটা চাকরির ব্যবস্থা করবেন। ৭ মাস হল খোকন নেই; এখন আর কেউ খোঁজ নেন না। এমনকি প্রয়োজনে কাউকে ফোন বা মেসেজ পাঠালেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলে না। এই অসহায় অবস্থায় প্রয়াত সাংবাদিকের পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চাইছে।
সংবাদকর্মীদের শ্রম অধিকার বাংলাদেশে খুবই নেতিবাচক অবস্থায় আছে। নিয়োগপত্র, নিয়মিত বেতন, নিয়মিত ভাতা, চাকরি শেষে পাওনা, এসবক্ষেত্রে বড় কয়েকটি গণমাধ্যম ব্যতিরেকে সর্বত্রই চরম অনিয়ম চলছে। ঢাকার বাইরের সাংব্দিকরা তো একেবারেই উপেক্ষিত। তাদের এমনকি বেতনও থাকে না। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা দীর্ঘদিন এ নিয়ে কথা বললেও এখানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অসহায় সাংবাদিকের পরিবারকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ব্যবসায়ী নেতা বা রাজনৈতিক দলের নেতাদের দিকে।
মিই/আরা/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ