যুক্তরাষ্ট্রের চাইল্ড সোলজারস প্রিভেনশন অ্যাক্ট (সিএসপিএ) তালিকায় বাড়ছে মুসলিম দেশের সংখ্যা। এবার নতুন করে যুক্ত হলো পাকিস্তান ও তুরস্কের নাম। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) প্রকাশিত হয় এই তালিকা। শিশু বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের সেনা হিসেবে নিয়োগ ও ব্যবহারকারী দেশগুলোর এই তালিকায় মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ও তুরস্কের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে গোটা বিশ্ব।
সর্বশেষ প্রকাশিত সিএসপিএ তালিকায় ১৫টি দেশের নাম রয়েছে। সেগুলো হলো আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, মিয়ানমার, কঙ্গো, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, মালি, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শিশুসেনা’ বলতে বুঝানো হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনী, পুলিশ কিংবা অন্য নিরাপত্তা সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর বাহিরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচক, কুলি, সংবাদবাহক, স্বাস্থ্যকর্মী, গার্ড এবং যৌনদাসদেরও শিশুসেনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) প্রতিবেদনেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান ও তুরস্ককে সামরিক সহায়তা দেয়া বন্ধের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি উঠেছে।
চাইল্ড সোলজারস প্রিভেনশন অ্যাক্টের জন্য বার্ষিক টিআইপি প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো, বিগত বছরে কোন দেশগুলো শিশুদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে বা সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকার–সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপে নিয়োগের বিষয়টিও উঠে আসে।
২০১০ সাল থেকেএই তালিকাটি প্রকাশ করা হচ্ছে। তখন থেকেই কঙ্গো, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাম প্রতিবছরই থাকছে। এর বাহিরে গত ১০ বছরে আফগানিস্তান, মালি, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়ার নাম বেশ কয়েকবার এসেছে। তবে এবারই প্রথম পাকিস্তান ও তুরস্কের নাম অন্তর্ভুক্ত হলো।
তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলোর ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে তা হলো আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ, সেনাবাহিনীতে বিদেশি অর্থায়ন, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকসেস ডিফেন্স আর্টিকেলস প্রোগ্রাম, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া এবং তাদের কাছে সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান তুরস্কের
শিশুদের সেনা হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনকে শুক্রবার রাতে এক বিবৃতির মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় সশস্ত্র এক মিলিশিয়া বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে তুরস্ক। ওই বাহিনী শিশুদের যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ সিরীয় কুর্দিশ যোদ্ধাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার দিকে বিবৃতিতে ইঙ্গিত দিয়েছে তুরস্ক। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানকে ‘প্রতারণা ও ভণ্ডামিপূর্ণ’ হিসেবেও অভিহিত করে দেশটি।
তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত কুর্দিশ মিলিশিয়া নিয়ে গঠিত সংগঠন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) শিশুদের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে, তাদের নির্যাতনও করে। এ নিয়ে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। আর কুর্দিশ যোদ্ধারা তিন দশকের বেশি সময় ধরে তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। সন্ত্রাসী হিসেবেই তাদের দেখা হয়।
এমনকি সিরীয় কুর্দিশ যোদ্ধাদের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনের অন্যতম কারণ বলে মনে করে তুরস্ক।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯৯০
আপনার মতামত জানানঃ