ডেস্ক রিপোর্ট : ইয়েমেন বর্তমানে কার্যত পশ্চিমাদের নিষিদ্ধ অস্ত্রের পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সৌদিজোটের হামলায় মারা যাচ্ছে অগণিত মানুষ। বেসামরিক স্থাপনাসহ নারী ও শিশুদের উপর নিক্ষেপ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত গোলাবারুদ, জীবনু ও রাসায়নিক অস্ত্র। পুরো ইয়েমন যেন পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর পরীক্ষাগার ও ইয়েমেনের সাধারণ মানুষগুলো তাদের গিনিপিগ। ইয়েমেনের হুথি সমর্থক ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হামিদ আব্দুল কাদের আন্তার’ও একই কথা বলেছেন, ‘তার দেশ পশ্চিমাদের নিষিদ্ধ অস্ত্রের পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে’।
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের আগ্রাসন শুরুর পর ৬৮ তম মাস শেষ হতে চললো। বহুদেশ এ যুদ্ধ থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইয়েমেন পশ্চিমাদের নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে গত ৬৮ মাসে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। গুচ্ছ বোমা, জীবাণু অস্ত্র, ফসফরাস বোমা, রাসায়নিক অস্ত্র ও নার্ভ গ্যাসের বোমা ব্যবহার করে একদিকে তারা গণহত্যা চালাচ্ছে অন্যদিকে এসব নিষিদ্ধ অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রেরও পরীক্ষা চালিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের গুচ্ছবোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের হাইকমিশনারের মুখপাত্র রবার্ট কুলওয়েল বলেছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে নিষিদ্ধ ঘোষিত গুচ্ছ বোমা ব্যবহার করেছে। ২০০৮ সালে এ ধরনের বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি আইন পাশ হয় এবং তাতে ১০০ টি দেশ সই করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যেসব নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির তৈরি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে সৌদি সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্রের যোগানদাতা হচ্ছে আমেরিকা। সৌদি আরব তার প্রয়োজনীয় অস্ত্রের ৭৩ শতাংশই আমদানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ কয় বছরে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে ২৫% অস্ত্র বিক্রি করেছে। ব্রিটেন সৌদি আরবের কাছে ৬৪ লাখ পাউন্ড মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে।
ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হামিদ আব্দুল কাদের আন্তার বলেছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান বাহিনী গত ছয় বছরে ১০ লক্ষবার ইয়েমেনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের অস্ত্র নির্মাণ কোম্পানিগুলো ইয়েমেনকে তাদের বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্রের পরীক্ষাগারে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ এসব অস্ত্র ব্যবহার করে তারা ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে।
এসব নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের ফলে ইয়েমেনের জনগণের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ পর্যন্ত হাজার হাজার ইয়েমেনি নিহত ও হতাহত হওয়া ছাড়াও দুরারোগ্য বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ইয়েমেনের ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তোহা আল মোতাওয়াক্কেল বলেছেন, ইয়েমেন যুদ্ধ শুরুর পর যেসব এলাকায় এসব অস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ওই এলাকার বহু মানুষ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয় সত্বেও আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতার কারণে দেশটির জনগণের উপর বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের উপর এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ওআইসিসহ মুসলিম দেশগুলোর নীরবতা মানবাধিকার কর্মীদের হতবাক করে দিচ্ছে।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ