আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশ নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত এক যুগ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সহিংসতায় নিহত সাড়ে তিন লাখের মধ্যে প্রায় তিন লাখ ২৪ হাজারই ছোট শিশু। অর্থাৎ নিহত প্রতি ১০ জনের নয় জনই ছোট শিশু। প্রতিদিন গড়ে সেখানে ১৭০ জন করে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সহিংসতায় প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন পরোক্ষ কারণে।
নাইজেরিয়ায় সহিংসতা ও এর প্রভাব নিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) করা জরিপের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সহিংসতায় যে প্রাণহানি ঘটেছে তা ধারণার চেয়েও ১০ গুণ বেশি।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ২০০৯ সালে নাইজেরিয়ার সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী বোকোহারাম এই অঞ্চলে সহিংসতা শুরু করে। তারা সেখানে ২০ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে এবং বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এতে লাখ লাখ মানুষকে সাহায্য নির্ভর হতে হয়েছে। সহিংসতা শেষ হওয়ার কোনো চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না এখনো।
সহিংসতার কারণে দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এতে করে কৃষি উৎপাদন ও বাণিজ্য কমেছে। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা যারা কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয়ণ ও সুপেয় পানির অভাবে ভুগছে। তাদের মধ্যে শিশুরা বেশি ভুক্তভোগী। আরও এক দশক সহিংসতা চললে এই সংখ্যা আরও ১৫ লাখ ছাড়াবে।
কেবল উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতেই এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৭ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বোকোহারাম ২০১৬ সালে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এদের এক ভাগ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত’র-আইএসআইএল (আইএসআইএস) সঙ্গে জোট বাঁধে। এই গোষ্ঠীই এখন বেশি ভয়ঙ্কর। সামরিক অভিযান চালমান থাকলেও তারা প্রতিবেশি ক্যামেরুন, চাদ ও নাইজারে হামলা ও সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশে শিক্ষার্থীদের বারবার অপহরণ করা হচ্ছে৷ ২০১৪ সালে বোকো হারামে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীর নিখোঁজ হওয়া সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা৷
নাইজেরিয়ার কেন্দ্র ও উত্তর–পশ্চিমে গ্রামাঞ্চলে লুটপাট, গবাদিপশু চুরি ও মানুষকে জিম্মি করছে বিভিন্ন সশস্ত্র দল। মুক্তিপণের জন্য অপরাধীরা প্রায়ই এ রকম ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে।
জঙ্গিদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার একটি ইসলামপন্থী রাষ্ট্রের পক্ষে লড়াই করে আসছে৷ আবারও অপহরণের ঘটনায় নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে৷
লাগোসের আর্চবিশপ ৬১ বছর বয়সী আলফ্রেড অ্যাডেওয়াল মার্টিনস, বর্তমান পরিস্থিতিতে নাইজেরিয়ার সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশকে নৈরাজ্যের হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ৷ সারা দেশে অপহরণসহ সব ধরনের সহিংসতা বাড়ায় তিনি উদ্বিগ্ন ৷
তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি সর্বস্তরে ব্যর্থ হয়েছে৷
সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গীর্জা এবং মসজিদ এবং নাগরিক সমাজকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ