চীনের লাগাতার দমনপীড়নের জেরে বন্ধ হয়ে গেল হংকংয়ের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রপন্থী পত্রিকা ‘অ্যাপল ডেইলি’। মিডিয়া মুঘল জিমি লাইয়ের এই পত্রিকাটির সমস্ত সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করার পর প্রকাশনা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে পত্রিকাটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে পত্রিকাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৩ জুন) এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।
বুধবার পত্রিকা কর্তৃপক্ষের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবারই পত্রিকার সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। বুধবার মধ্যরাতের পরে আর কোনও সংবাদ প্রকাশ করা হবে না।’
একে চীন নিয়ন্ত্রিত শহরটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অ্যাপল ডেইলি এর আগে তাদের পত্রিকার কার্যক্রম চলবে না বন্ধ হবে সে বিষয়ে শুক্রবার এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছিল; তার দুইদিন আগেই মূল কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাবলয়েডটি বন্ধের ঘোষণা এল।
ট্যাবলয়েড এ পত্রিকাটি চীন ও হংকংয়ের শাসকদের সমালোচনায় মুখর ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই একাধিক অভিযোগ মাথায় নিয়ে আগে থেকেই কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, এডিটর ইন চিফ রাইওয়ান ল ওয়াই কং এবং চিফ অপারেটিং অফিসার ও পাবলিশার চ্যা কিম হাং তিনটি সংস্থার সাথে একজোট হয়ে পত্রিকার সম্পাদক জিমি লাইয়ের সাথে মিলে চীনর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।
জিমি লাই ২০১৮ সালের একটি মামলায় ২০ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল ডেইলি হংকং এর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বেইজিং এর সমালোচনা করে আসছিল।
এদিকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে সংবাদপত্রটির একজন কলামিস্টকে গ্রেপ্তার করেছে হংকং পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ‘বিদেশি শক্তির সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বুধবার হংকং পুলিশের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, আটক হওয়া ব্যক্তির বয়স ৫৫ বছর। তিনি লি পিং নামে অ্যাপল ডেইলিতে কলাম লিখতেন।
শুরু থেকেই হংকংয়ের স্থানীয় প্রশাসন এবং চীনের কমিউনিস্ট সরকারের কট্টর সমালোচনা করে আসছিল জিমি লাইয়ের মালিকানাধীন ‘অ্যাপল ডেইলি’। পত্রিকা কর্তৃপক্ষের এমন ভূমিকা মেনে নিতে পারেনি হংকং ও চীন কর্তৃপক্ষ।
গত ১৭ জুন বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০০ পুলিশ কর্মকর্তা পত্রিকাটির হংকং অফিসে অভিযান চালান।
বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ সময় পুলিশ প্রধান সম্পাদক ও চারজন নির্বাহীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পত্রিকাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ডেইলি লিমিটেড, অ্যাপল ডেইলি প্রিন্টিং লিমিটেড ও অ্যাড ইন্টারনেট লিমিটেডের বড় অঙ্কের সম্পদ জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি সাংবাদিকদের কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখেছে পুলিশ।
পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাদের তল্লাশি ও সাংবাদিককতার উপকরণ জব্দের ক্ষমতা দেওয়া আছে।
পুলিশের অভিযাগ, ২০১৯ সাল থেকে এই ট্যাবলয়েডটি ডজনখানেকের বেশি প্রতিবেদন ছেপেছে, যা হংকংয়ের নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে। তবে সবশেষ প্রতিবেদন কবে ছাপা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তারা।
যদিও ১৭ জুনের তল্লাশির ঘটনা অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে পুলিশের দ্বিতীয় অভিযান। এর আগে গত বছর বিদেশি শক্তিগুলোর সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে পত্রিকাটির মালিক ও গণতন্ত্রপন্থী জিমি লাইকে গ্রেপ্তার করতে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ডিসেম্বর থেকে কারাভোগ করছেন লাই।
২০২০ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি পাস করা হয়। এ আইন পাসের পর থেকে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী অধিকারকর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে চীন সরকার। এ আইনে জিমি লাই ছাড়া আরও কয়েকজন অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া হয়েছে। গত বছর জিমি লাইকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহল চীনের সমালোচনা করছে। কিন্তু চীন জিমি লাইকে একজন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
চীন ও হংকংয়ের স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারা লাগাতার দমনপীড়নের শিকার হওয়ার পরেই পত্রিকার সঙ্গে জড়িত বাকি কর্মচারি-কর্মকর্তাদের বাঁচাতে প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ‘অ্যাপল ডেইলি’র পরিচালকরা। প্রথমে সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, শনিবারের আগেই ২৬ বছর ধরে প্রকাশিত পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু ফের পত্রিকার এক কলামিস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই তড়িঘড়ি পত্রিকা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ