সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় অংশ নেওয়া সৌদি আরবের চারজন যুক্তরাষ্ট্রে আধাসামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদনেই ওই ব্যক্তিরা সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টে উঠে এসেছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানায়।
খাসোগি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক। তিনি একসময় সৌদির রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে কট্টর সমালোচক বনে যান। বিশেষ করে সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ দেশটির বর্তমান নেতৃত্বের কট্টর সমালোচনা করছিলেন তিনি।
খাসোগি তার বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান। সৌদি আরব থেকে পাঠানো ঘাতক দল সেখানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে গায়েব করে দেওয়া হয়। তার দেহাবশেষ আর পাওয়া যায়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টায়ার ১ গ্রুপ’ নামের একটি বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন খাসোগির ঘাতক দলের চার সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসভিত্তিক এই কোম্পানিটি ২০১৭ সালে সৌদির ওই চার এজেন্টকে আধা সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ২০১৪ সালে প্রথম সৌদির এজেন্টদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। পরে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলের শুরুর দিক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
খাসোগিকে হত্যা করা হয় ট্রাম্পের শাসনামলেই।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বেসরকারি ইক্যুইটি ফার্ম সারবেরাস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের অঙ্গ সংগঠন টায়ার ওয়ান গ্রুপ। এই সারবেরাস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের এক শীর্ষ কমকর্তা ল্যুই ব্রেমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি জ্যেষ্ঠ পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসনকে দেয়া তার লিখিত সাক্ষ্য থেকেই জানা গেছে খাসোগির হত্যাকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নেয়ার বিষয়টি।
লিখিত সাক্ষ্যে ল্যুই ব্রেমার নিশ্চিত করেন, সৌদি গুপ্তচরদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল টায়ার ওয়ান গ্রুপ।
তার দাবি, প্রশিক্ষণের ধরন ছিল আত্মরক্ষামূলক এবং খাসোগিকে হত্যার সঙ্গে ওই প্রশিক্ষণের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
ব্রেমার লিখেন, খাসোগিকে হত্যায় জড়িতদের চারজন ২০১৭ সালে প্রশিক্ষণ নেয়। এদের মধ্যে দুইজন আরও আগে, অর্থাৎ, ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়।
এ বিষয়ে জানতে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এএফপি। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। তবে তারা মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বশীল ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রথম দাবি করা হয়, সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যাকারী দলের চার সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।
ওই কলামে বলা হয়, সিআইএ তৎকালীন প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল, টায়ার ১ গ্রুপ তাদের নিবন্ধন ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে, যা সন্দেহজনক।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সুরক্ষায় নিয়োজিত অভিজাত নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য খাসোগি হত্যায় জড়িত ছিল। এই সাতজনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নেয়া চার ব্যক্তির কেউ আছে কি না, তা নিশ্চিত করেনি নিউইয়র্ক টাইমস।
হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদি রাজপরিবারের দাবি, স্বপ্রণোদিত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সৌদি ঘাতকরা। এর সঙ্গে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই।
সৌদি আরব প্রথমে খাসোগি খুন হওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শুরু থেকেই সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সন্দেহ করা হয়। তবে তিনি এই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছেন। অবশ্য সৌদির শাসক হিসেবে তিনি এই হত্যার দায় এড়াতে পারেন না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন।
খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদির আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তিনজনকে দিয়েছেন কারাদণ্ড। পরে খাসোগির পরিবার হত্যাকারীদের মাফ করে দিলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচজনের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ