ভরা মৌসুমে দেশে চালের বাজার অস্থির। ধানের বাড়তি দামের অজুহাত দেখিয়ে মিল মালিকরা কারসাজির মাধ্যমে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ব্যর্থ। অথচ এশিয়ার শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে খাদ্যপণ্যটির দর কমেছে।
জানা গেছে, এশিয়ার চাল রফতানিকারক দেশগুলোয় আগে থেকেই চালের দাম কমতির দিকে ছিল। সর্বশেষ সপ্তাহে [নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ] খাদ্যপণ্যটির দরপতন আরও জোরদার হয়েছে। এ সময় ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কমে এসেছে। মূলত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়তির দিকে থাকায় এশিয়ার বাজারে চালের দামে ধারাবাহিক পতন বজায় রয়েছে।
চীনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। তবে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় ভারত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৬৬-৩৭০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। যা মার্চের পর দেশটির বাজারে সর্বনিম্ন দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে চালের দাম কমেছে টনপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ ডলার।
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৪৭০-৪৮৫ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। আর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির দাম কমেছে টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০ ডলার। একই চিত্র দেখা গেছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামেও। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের সর্বনিম্ন দাম টনপ্রতি ৪৯৫ ডলারে নেমে এসেছে।
এদিকে দেড় মাস আগে সরকার দেশের বাজারে মাঝারি ও সরু চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তার সুফল নেই ভোক্তা পর্যায়ে। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায় চালের দর নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মিলাররা তা মানছে না। বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০-২৫০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তি। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
এদিকে ১৪ নভেম্বর ২০২০, শনিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬৪ টাকা কেজি। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায়। যা আগে ছিল ৫৪ টাকা কেজি। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল কেজি ৪৩-৪৪ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সম্ভাব্য উৎপাদন ঘাটতি এবং দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার স্বল্প পরিমাণ চাল আমদানি করতে পারে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারী ও অভ্যন্তরীণ বাজারে দামের অস্থিরতার মধ্যে সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় সরকারের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ ধান সংগ্রহের অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
চালকল মালিকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমার একটা প্রভাব দেশের বাজারেও পড়বে। কারণ দেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজার ফলো করেন। দাম যদি পড়তে থাকে তখন মজুদ করলে লোকসানের একটা সম্ভাবনা থাকে। তখন হয়তো সেই চাল ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, এবার বোরো মৌসুমে দেশে মোট ৪৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ হেক্টরে হাইব্রিড, ৩৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে উফশী ও ২৯ হাজার হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ