জেফ বেজোসের রকেট ইঞ্জিন তৈরির প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন আগামী ২০ জুলাই মানুষ নিয়ে প্রথমবারের মতো মহাকাশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছে। প্রথম সে যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস স্বয়ং, সঙ্গে থাকছেন তার ছোট ভাই মার্ক বেজোস।
বেজোস কেবল আমাজনেরই নন, মহাকাশভ্রমণের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনেরও প্রতিষ্ঠাতা। ৭ জুন তিনি ঘোষণা দেন, ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নিউ শেপার্ড নভোযানে ক্ষণিকের জন্য মহাশূন্য থেকে ঘুরে আসবেন। অ্যাপোলো ১১ অভিযানে চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৫২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ২০ জুলাই দক্ষিণ টেক্সাসের ব্লু অরিজিনের নিজস্ব রকেট উড্ডয়নকেন্দ্র থেকে নিউ শেপার্ড উড্ডয়নের কথা আছে।
বেজোসের সে ঘোষণার পর তাকে মহাকাশ থেকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে বাধা দিতে অনলাইনে দুটি পিটিশন চালু করা হয়। চালুর দিন দশেকের মধ্যে হাজারো মানুষ তাতে অংশ নেন।
‘জেফ বেজোসকে পৃথিবীতে ফিরে আসতে দিয়ো না’ শিরোনামে চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে খোলা পিটিশনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেন।
গত ৭ জুন মহাকাশ ভ্রমণের ঘোষণা দেয়ার পর চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত দুটি পিটিশন করা হয়েছে। এতে জেফ বেজোসকে পৃথিবীতে আর না ফেরানোর জন্য আবেদন করেছেন পিটিশনের আয়োজনকারীরা। দুটি পিটিশনেই মাত্র ১০ দিনের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
পিটিশনের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘বিলিয়নিয়ারদের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়, পৃথিবী অথবা মহাকাশেও নয়। তবে তারা যদি দ্বিতীয়টি পছন্দ করেন তাহলে তাদের সেখানেই থাকতে দেয়া হোক।’
কিছু কিছু স্বাক্ষরকারী পিটিশনে স্বাক্ষরের কারণ সম্পর্কেও লিখেছেন। এসব মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে- ‘পৃথিবীতে ফিরতে দেয়া একটি অগ্রাধিকার, অধিকার নয়’, এবং ‘পৃথিবী জেফ, বিল (গেটস), ইলন (মাস্ক) এবং অন্যান্য বিলিয়নিয়ারদের চায় না।’
আরেকটি পিটিশন করা হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘জেফ বেজোসকে পৃথিবীতে না ফেরানোর জন্য পিটিশন’। এতে স্বাক্ষর করেছেন ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং আরও অনেকে এতে যোগ দিচ্ছেন।
এই পিটিশনের ডাক দেয়া হোসে অর্টিজ লিখেছেন, বেজোস ‘পৃথিবীতে আধিপত্য করতে যাওয়া একজন শয়তান প্রভু’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘মানব সম্প্রদায়ের ভাগ্য আজ আপনাদের হাতে।’
দুটি পিটিশনেরই লক্ষ্য অন্তত ২৫ হাজার করে স্বাক্ষর যোগাড় করা। চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এর ফলে পিটিশন দুটি এই ওয়েবসাইটের শীর্ষ দুটি পিটিশনে পরিণত হবে।
জেফ বেজোস, তার ভাই মার্ক বেজোস এবং ব্লু অরিজিনের ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিলাম জয়ী এক ব্যক্তি এই মহাকাশ ভ্রমণে যাবেন। ভ্রমণের স্থায়ীত্ব হবে মোট ১১ মিনিট। তারা নিউ শেপার্ড রকেটে একটি ক্যাপসুলের ভেতরে থাকবেন যা রকেটের বুস্টারের ওপর বসানো থাকবে।
রকেটটি যখন কারমান লাইনে পৌঁছাবে (কারমান লাইনকে পৃথিবী থেকে মহাকাশের সীমানা ধরা হয়। এর দূরত্ব পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত) তখন ক্যাপসুলটি বুস্টার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। এটি তারপর আবার পৃথিবীতে ফিরতে শুরু করবে এবং প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করবে।
৭ জুন ইন্সটাগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জেফ বলেছেন, ‘আমি এই ফ্লাইটে যেতে যাই কারণ এটি এমন একটি জিনিস যা সারাজীবন ধরে আমি করতে চেয়েছি। এটি একটি অ্যাডভেঞ্চার, এটি আমার জন্য অনেক বড় কিছু।’
বেজোস বলেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবী দেখা, এটা আপনাকে বদলে দেয়। এটা এই গ্রহের সঙ্গে, মানবতার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক বদলে দেয়। এটাই একমাত্র পৃথিবী। আমি এই অভিযানে যেতে চাই। কারণ, এ কাজ আমি আজীবন করতে চেয়েছি।’
২০০০ সালে ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে ৬০ ফুট উঁচু নিউ শেপার্ড রকেট নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। ২০১৫ থেকে মোট ১৫ বার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করলেও সেগুলোতে মানুষ ছিল না।
রকেট ইঞ্জিন তৈরি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ব্লু অরিজিনের মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের কাছে মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট বিক্রি। ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে ১০০ কিলোমিটার ওপরে কারমান লাইনের আশপাশ থেকে ঘুরিয়ে আনা হবে।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার সৌভাগ্যের পাশাপাশি মিনিট কয়েকের ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাটিতে ফিরে আসবেন তারা।
নিউ শেপার্ডের আসন নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্লু অরিজিনের ‘ক্লাব ফর দ্য ফিউচার’ ফাউন্ডেশনে দান করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লেখা আছে। এ তহবিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে আগ্রহী করে তুলতে ব্যয় করা হবে।
ব্লু অরিজিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভার্জিন গ্যালাকটিক এ পর্যন্ত প্রতিটি দুই থেকে আড়াই লাখ ডলারে প্রায় ৬০০টি মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করেছে। সেদিক থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি মনে হতে পারে। অবশ্য ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পরিকল্পনায় যে মহাকাশ ভ্রমণ রয়েছে, তা থেকে আবার বেশ কম।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ