হত্যাকাণ্ডের শিকার একটি কানাডীয় মুসলিম পরিবারের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল করেছে। শুক্রবার(১১ জুন) অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরের বাসিন্দারা এই মিছিল করেন বলে রয়টার্স ও আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গত রোববার নাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামে ২০ বছরের এক তরুণ ট্রাক চাপা দিয়ে একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করে। পুলিশ এ ঘটনাকে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। পরে পুলিশ ভেল্টম্যানকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কানাডার রাজনীতিবিদরা। সব দলের পক্ষ থেকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ এবং ইসলামফোবিয়া বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার মিছিলে যোগ দেওয়া অনেকের হাতে ‘এখানে ঘৃণার স্থান নেই’, ‘ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসা’ প্ল্যাকার্ড ছিল। জনবহুল অন্টারিওর অন্যান্য শহরেও মিছিল হয়েছে।
মিছিলে যোগ দেওয়া ১৯ বছরের কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জারাদ বলেন, ‘সেরা অংশটি কেবল সংখ্যা ছিল না … তবে লন্ডনের প্রতিটি সম্প্রদায় থেকে আসা মানুষ এর জন্য একত্রিত হয়েছিল।’
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, যেখানে পরিবারটি নিহত হয়েছিল সেখান থেকে লন্ডন, অন্টারিওর লোকেরা প্রায় ৭ কিলোমিটার (৪.৪ মাইল) যাত্রা করে কাছের একটি মসজিদে গিয়ে থামে। যেখান থেকে ঘাতক ভেল্টম্যানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।
ঘটনাটিকে স্মরণ করে কিছু সময় নীরবতা পালন করে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা লন্ডনে বসবাসরত ৩০,০০০ মুসলমানের পক্ষে সালাম দিয়ে বক্তৃতা করেন। একইসাথে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষের ধিক্কার জানানো হয়।
কানাডার টরেন্টো, অটোয়া, মন্ট্রিল এবং কুইবেকেও এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কুইবেক শহরের যেখানে ২০১৭ সালে একটি মসজিদে গুলি চালানো হয়েছিল এবং তাতে ছয়জন নিহত হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার ঘাতক ভেল্টম্যানকে কানাডার আদালতে অল্প সময়ের জন্য হাজির করা হয়েছিল এবং আগামী সোমবার তাকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। তার বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রি হত্যার চারটি অভিযোগ এবং একটি হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ দাখিল হয়েছে।
গত রোববার কানাডায় এক মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে নারী-শিশুও রয়েছে। দেশটির অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে এ হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ইসলামবিদ্বেষ থেকেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরিবারটির সদস্যদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে।
২০১৭ সালে কুইবেক শহরের মসজিদে ছয় জনকে হত্যার পর দেশটির মুসলিমদের ওপর এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। রবিবারের ঘটনায় নিহত চার জনের মধ্যে তিন জনই নারী। তাদের বয়স যথাক্রমে ৭৪, ৪৪ ও ১৫ বছর। নিহত অপর ব্যক্তির বয়স ৪৬ বছর বয়সী। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।
হামলাকারী হিসেবে ২০ বছরের এক কানাডিয়ান তরুণকে শনাক্ত করা হয়েছে। নাথানিয়াল ভেল্টম্যান নামের ওই তরুণ অন্টারিও-র লন্ডন শহরের বাসিন্দা। বর্বরোচিত ওই হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে সাত কিলোমিটার দূরের একটি মার্কেট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে সে কোনও ‘হেট গ্রুপের’ সদস্য কিনা সেটি এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সে পরিবারটির সবাইকে খুন করতে চেয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে একমাত্র সদস্য হিসেবে ৯ বছরের একটি শিশু বেঁচে গেছে। শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তরুণের বিরুদ্ধে চার জনকে খুন এবং এক জনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে মুসলিম বিদ্বেষ না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ