কানাডার সঙ্গে ভারতের বিবাদের রেশ পড়তে পারে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাতেও কাটছাঁট করতে হতে পারে। খালিস্তানি নেতা খুনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে কানাডার অভিযোগের পরেই দেশের প্রশাসনকে এই বার্তা দিয়েছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঠিক কী বলা হয়েছে এই রিপোর্টে? জানা গিয়েছে, ভারত ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পরেই আমেরিকায় বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছিলেন গারসেটি।
সেখানে তিনি বলেন, যেহেতু কানাডার প্রতিবেশী দেশ আমেরিকা তাই ভারতের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিক সম্পর্কে অবনতি হতে পারে। এই সময়ের কথা মাথায় রেখেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগও কমিয়ে দেয়া উচিত মার্কিন কূটনীতিকদের। যদিও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই অবনতি সাময়িক বলেই জানিয়ছিলেন গারসেটি।
মার্কিন কূটনীতিকদের অনুমান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো। কিন্তু ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বের জেরে এবং গারসেটির এই মন্তব্যের পরে সেই সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে। তবে কূটনীতিকদের মতে, এই সমস্যা সাময়িক।
কয়েকদিনের মধ্যেই ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফের স্থিতাবস্থা ফিরে আসবে বলেই তাদের অনুমান। তবে গারসেটির এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে দুই দেশের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে, সেদিকেও নজর থাকবে।
প্রসঙ্গত, খালিস্তানি খুনে ভারতের যোগের অভিযোগ তুলেছে কানাডা। এই অভিযোগ ঘিরে বেশ কয়েকবার কানাডার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডো সরকার যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে তা খতিয়ে দেখতে ওটয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে ওয়াশিংটন বলে খবর।
তবে কানাডা বিতর্কে মার্কিন প্রশাসনের এই হস্তক্ষেপ একেবারেই ভালোভাবে নিচ্ছে না নয়াদিল্লি। ফলে খলিস্তানি কাঁটায় দুদেশের মিত্রতার সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয় কি না সেদিকেই এখন নজর কূটনীতিকদের।
কানাডা ও ভারতের মধ্যে যে কূটনৈতিক বিরোধ শুরু হয়েছে, তা যাতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলির ওপরে প্রভাব না ফেলে, তার জন্যই এখন প্রবল প্রচেষ্টা চালাবে পশ্চিমা বিশ্বের মন্ত্রী আর কর্মকর্তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলি এই মুহূর্তে কখনই চাইবে না যে এমন একটা বিরোধ তৈরি হোক যেটি ভারতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে। বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর দাবার বোর্ডে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ।
তারা যে শুধুই একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি, তা নয় – ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আবার চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবেও ভারতকে দেখে পশ্চিমা দেশগুলি।
এটা ভারতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল যখন রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে নাম উল্লেখ না করেই একটি চূড়ান্ত বিবৃতিতে ঐকমত্যে পৌঁছিয়েছিল ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র-দেশগুলি।
এই বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর মাধ্যমে তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করার পথ বেছে নিয়েছিল, যদিও তাতে আবার কিয়েভের একটা অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরেকটি আশঙ্কা আছে যদি বিভিন্ন দেশ কানাডা-ভারত বিরোধে কোনও একটা পক্ষ নেওয়া শুরু করে।
গত জুনে কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে এক শিখ নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই সপ্তাহের গোড়ায় অভিযোগ করার ফলে দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়।
ভারত সম্প্রতি নিজেকে উন্নয়নশীল দেশগুলি, যাদের কখনও ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসাবে পরিচয় দেওয়া হয়, তাদের নেতা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই দেশগুলির মধ্যে অনেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ কঠোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে এইসব দেশগুলিকে বোঝানো যায় যে এই যুদ্ধ তাদের কাছে এবং তাদের অর্থনীতির কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনীতিকরা চাইবেন না যে তাদের সেই প্রচেষ্টায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক ভারত-কানাডা বিতর্ক, যেটাকে দুটি কমনওয়েলথ দেশের মধ্যে উত্তর বনাম দক্ষিণ বিরোধ অথবা একটি ট্রান্স-আটলান্টিক শক্তি আর একটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব হিসাবে পরিগণিত হয়।
আপনার মতামত জানানঃ