রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ও বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করেছে দেশটির একটি আদালত। সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগে বুধবার(৯ জুন) মস্কো সিটি কোর্ট নাভালনির সংগঠনগুলোকে উগ্রপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করে এ রায় দেন। খবর আল জাজিরার
আদালতের আদেশের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তার নেটওয়ার্কের আঞ্চলিক অফিস ও দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের এক মুখপাত্র আদালতের বাইরে বলেন, নাভালনির সংগঠনগুলো যে তথ্য প্রচার করে, তা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্রুতায় উসকানি দেয় বলে দেখা গেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে— মস্কো সিটি কোর্টের দেওয়া এ রায় তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। ফলে নাভালনির প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর ফাইটিং করাপশন (এফবিকে) এবং নেটওয়ার্ক অব রিজিওনাল অফিসার্স অ্যাক্রস রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সরকারি কোনো পদ-পদবির জন্য প্রার্থী হতে পারবেন না।
আদালতের এ আদেশের ফলে নাভালনির রাজনৈতিক সংগঠনের হয়ে কর্মীরা তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে সাজা হিসেবে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ যদি প্রকাশ্যে নাভালনির রাজনৈতিক নেটওয়ার্ককে সমর্থন করেন, তাহলে তিনি দেশটির নির্বাচনে নিষিদ্ধ হতে পারেন।
রাশিয়ায় উগ্রপন্থি সংগঠনের তালিকায় অন্তত ৩০টি সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা, জাহোভেস ইত্যাদি সংগঠনগুলো রয়েছে। সেই তালিকায় এখন নাভালনির সংগঠনও অন্তর্ভুক্ত হল।
আদালত এমন একসময় বিরোধীদলীয় নেতা নাভালনির সংগঠনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করল যখন দেশটির স্টেট দুমা (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি।
এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিসেবে আখ্যয়িত করেছেন নাভালনি সমর্থকরা। তারা বলছেন, আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পুতিন-বিরোধীদের স্তব্ধ করে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
নাভালনি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
আদালতের আদেশের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নাভালনি। তিনি পিছু হটবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তার সমর্থকদের এখন তাদের কাজের ধরন পরিবর্তন করতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে মস্কোর একটি আদালত দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনকে (এফবি) বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর সরকারি কৌঁসুলিরা সংগঠনগুলোকে ‘সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থি’ সংগঠনের তালিকায় যুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিল।
৪৪ বছর বয়সী নাভালনি রাশিয়ার একজন সুপরিচিত বিরোধী নেতা। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। নাভালনি বর্তমানে রাশিয়ার কারাগারে আছেন।
২০২০ সালের আগস্টে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন নাভালনি। সে সময় তিনি সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফিরছিলেন। যাত্রাপথে উড়োজাহাজেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বহনকারী প্লেনটি সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তিনি কোমায় চলে যান। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মান বিশেষজ্ঞরা জানান, নাভালনিকে রাশিয়ান নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরে অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও একই অভিমত দেন।
বিষ প্রয়োগের জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করেন নাভালনি। তবে পুতিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন।
দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তারের হুমকি উপেক্ষা করে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে তকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর ধারবাহিকতায় ৯ জুন নাভালনির প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোও নিষিদ্ধ করে রাশিয়ার আদালত। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাশিয়ার কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ