এফবিআই পরিচালিত একটি এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ফাঁদ পেতে বিশ্বজুড়ে সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১৮টি দেশের ৮ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা।
অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এনক্রিপ্টেড মেসেজ পড়ে অপরাধীদের ধরছে। অপারেশন ট্রোজান শিল্ড নামে অভিযানটি পরিচালনা করছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
অ্যানোম অ্যাপের মাধ্যমে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে চোরাচালান, মাদক ও অর্থ পাচার এবং হত্যার মতো অপরাধ চ্যাট থেকে হ্যাক করছে। পরে এমন সন্দেহভাজন অপরাধীদেরকে ১৮টি দেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার জব্দ ও কয়েক টন মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মাদক বাণিজ্যে জড়িত অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অপরাধীদের ধরছে অস্ট্রেলীয় পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। সমন্বিত এই বৈশ্বিক অভিযানকে সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম বড় পরিসরের অভিযান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ অভিযানে যুক্ত ছিল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক চক্রগুলোর ওপর নজরদারি চালাতে অ্যানোম নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপ চালু করে তারা। গত ১৮ মাস ধরে এমন অপারেশন পরিচালনা করে সফল হয় বলে দাবি তাদের।
আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে শুরু করা এমন অপারেশনের সফলতা ও সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোপোল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যানোম প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযানে তারা সফলতা পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টর কেলভিন শিভারস বলেন, অপারেশন ট্রোজান শিল্ডের সফলতার পেছনে রয়েছে উদ্ভাবনী শক্তি, আন্তরিক চেষ্টা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহযোগিতা।
১৮ মাস ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালানো অভিযানে ছয় টন কোকেইন, পাঁচ টন মারিজুয়ানা, দুই টন ম্যাথঅ্যামফেটামিন, ২৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ও একশ ৪৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অ্যানোম অ্যাপের মাধ্যমে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায় ২৭ মিলিয়ন এনক্রিপটেড মেসেজ যাচাইবাছাই করেছে। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের ৭০০ স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ৮ শতাধিক অপরাধীকে আটক করা হয় বলে জানানো হয়েছে।
এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চালানো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধ্বংস করার এমন ঘটনা খুব বেশি নেই। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, এই অপারেশন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ। শুধু অস্ট্রেলিয়ার জন্যেই নয়, এই পদক্ষেপ পুরো বিশ্বে কাঁপুনি সৃষ্টি করবে। এটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ন সময়।
অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় পুলিশ কমিশনার রিস কেরশ জানান, তাদের দেশে অভিযানে নিষিদ্ধ মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের সদস্যসহ ২২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫ জন।
ইউরোপে এরই মধ্যে সুইডেনের ৭৫ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জার্মানিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন। এ ছাড়া ৪৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন নেদারল্যান্ডসে।
অভিযানটি অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ ও এফবিআই ২০১৮ সালে পরিকল্পনা করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে আসার পর মোবাইল অ্যাপ অ্যানোমের মাধ্যমে তদন্তকারীরা সংঘবদ্ধ অপরাধীদের খুঁজতে শুরু করেন।
অপরাধী চক্রের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অ্যাপটি অ্যানম নামে এফবিআই পরিচালিত একটি এনক্রিপ্টেড ডিভাইস কোম্পানি বানিয়েছিল। এফবিআই পরে গোপনে তাদের চরদের মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের কাছে ওই অ্যাপসহ ফোন সরবরাহ করে।
অ্যাপটি দ্রুতই অপরাধীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শতাধিক দেশের ৩০০টিরও বেশি অপরাধী চক্র অ্যাপ সম্বলিত প্রায় ১২ হাজার ডিভাইস ব্যবহার করে।
অ্যাপটির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মাদক বেচাকেনা, সহিংসতা, খুনসহ সম্ভাব্য নানান অপরাধ ও অপরাধের পরিকল্পনার কথা জানতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২৪৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ