করোনা থেকে সুরক্ষায় তৈরি হওয়া লাখ লাখ টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে ইউনিসেফ। ধনী দেশগুলোকে বাড়তি টিকা দরিদ্রদের দান করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি।
জাতিসংঘের এই শিশু বিষয়ক তহবিল বলছে, ধনী দেশগুলো যদি এখনি তাদের কাছে থাকা বাড়তি টিকা দরিদ্র দেশগুলোতে না পাঠায় তাহলে করোনাভাইরাস টিকার লাখ লাখ ডোজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সারাবছর ধরেই কোভিড টিকার বিঘ্নহীন সরবরাহ দরকার, কারণ একবারেই সব টিকা প্রয়োগ করতে পারার সঙ্গতি দরিদ্র দেশগুলোর নেই। যুক্তরাজ্য এবং বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে তাদের বাড়তি ডোজ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; তবে দেশগুলোকে এখন সেসব ডোজ দ্রুত সরবরাহে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
ধনী দেশগুলোকে ‘এখনি টিকা দান’ করতে ইউনিসেফের অনুরোধে বিলি আয়লিস ও ডেভিড বেকহামের মতো তারকারাও সংহতি জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
এ তারকারা শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি-৭কে লেখা এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অগাস্টের মধ্যে তাদের মজুদের ২০ শতাংশ ডোজ দান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
“মহামারী সব জায়গায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও শেষ হবে না,” বলেছেন বেকহাম। অন্য যারা এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে আছেন অ্যান্ডি মারে, অলিভিয়া কোলম্যান, ইওয়েন ম্যাকগ্রেগর, লিয়াম পেইন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস, অরলান্ডো ব্লুম, কেটি পেরি, জেমা চ্যান, হুপি গোল্ডবার্গ, ক্লডিয়া শিফার ও ক্রিস হয়-র মতো তারকারা।
এক পর্যায়ে, সন্দেহাতীতভাবেই আমাদের ১৮-র কম বয়সীদেরও টিকা দিতে হবে। কিন্তু এই মুহুর্তের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সমগ্র বিশ্বের ঝুকিপূর্ণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাওয়া উচিত এমন গোষ্ঠীগুলোর টিকা নিশ্চিত করা, বিবিসি নিউজনাইটকে এমনটাই বলেছেন ইউনিসেফের লিলি কাপরানি।
এ কারণেই আমরা যুক্তরাজ্যের মতো দেশ এবং জি-৭ কে বলছি স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে টিকা দিতে, একইসঙ্গে দেশের ভেতর নিজেদের জনগণের জন্য টিকাদান কর্মসূচিও চালু রাখতে, বলেছেন তিনি।
ইউনিসেফ এমনটা চাইলেও কয়েকদিন আগে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছিলেন, তারা এখন অন্য দেশে টিকা পাঠানোর আগে নিজেদের শিশুদের টিকা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
কোভ্যাক্সে কী পরিমাণ টিকা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অনেক দেশ আগে থেকে জানালেও যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি। শুক্রবার হ্যানকক বলেছেন, তাদের কাছে এখন কোভিড টিকার কোনো বাড়তি ডোজই নেই।
ইউনিসেফের কর্মকর্তা কাপরানি জি-৭ দেশগুলোকে এখনি টিকা দান করা শুরুর পাশাপাশি পুরো বছরজুড়েই এই দান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
“স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে অল্প অল্প করে নিয়মিত সররবরাহ করা দরকার, যেন ওই টিকাগুলো বিমানবন্দরের টারমাক থেকে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের হাতে পৌঁছায়,” বলেছেন তিনি।
জি-৭কে লেখা চিঠিতে তারকারা বলেছেন, জি-৭ দেশগুলো শিগগিরই এত ডোজ টিকা পাবে যে তারা জুন থেকে অগাস্টের মধ্যে তার ২০ শতাংশ দান করে দিতে পারে, এক্ষেত্রে তাদের নিজেদের টিকাদান কর্মসূচিতে কোনো রকমের ব্যাঘাতই ঘটবে না। দেশগুলো এমনটা করলে কোভ্যাক্সের কাছে ১৫ কোটির বেশি ডোজ জমা পড়বে।
টেনিস তারকা মারের মতো কয়েকজন ইউনিসেফের ভ্যাকসিনএইড আবেদনে সাড়া দিতে যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। কোভিডের বিভিন্ন টিকার ৪০ কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়ে রাখা যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে তাদের নাগরিকদের বড় একটি অংশকে ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মতো বেশিরভাগ ধনী দেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমনটা হলেও বিশ্বে এমন অনেক দেশও আছে, যারা এখনও টিকার প্রথম চালানই পায়নি। দরিদ্র অনেক দেশ ভ্যাকসিনের জন্য কেবল কোভ্যাক্সের ওপরই ভরসা করে আছে।
শিল্পোন্নত অনেক দেশ বছর শেষ হওয়ার আগেই তাদের প্রতিশ্রুত টিকা দান করার আশ্বাস দিয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেসব দেশকে এখনই তাদের মজুদ অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার অনুরোধ করেছে।
বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি
সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ৩২৫ জন এবং মারা গেছে ৩৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৩ জন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার ২৯২ জন এবং বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৪০ জন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার হার ৯৮ শতাংশ এবং মারা যাওয়ার হার ২ শতাংশ। সারা বিশ্বে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৭ জন এবং বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল।
বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে তিন কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ জন এবং মারা গেছে ছয় লাখ ১২ হাজার ৭০১ জন।
বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পর যথাক্রমে রয়েছে ভারত, ব্রাজিল, ফ্রান্স, তুরস্ক, রাশিয়া, ব্রিটেন, ইতালি, আর্জেন্টিনা ও জার্মানি।
ভারতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে দুই কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৯ জন এবং মারা গেছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৩৪৪ জন। ভারতের পরের অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১২ জন এবং মারা গেছে চার লাখ ৭৪ হাজার ৬১৪ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ