বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের টাকা-বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের এমন অভিযোগের পর অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, কারা দেশের টাকা নিয়ে যায়, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। তিনি আরো বলেন, পাচারকারীদের নামগুলো আমাদেরকে দেন। তাদের ধরা আমাদের জন্য সহজ হবে।
আজ বেলা ১১টা থেকে সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হয়। সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনও পাচারকারীদের অনেকেই জেলে আছে। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন তেমন নেই।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমেও তারা বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। আদালত একটি তালিকা চেয়েছিলেন কারা বিদেশে বাড়ি বানিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনো তা দিতে পারেনি।
কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া—এসব দেশে দুদকের একটি করে অফিস খোলার দাবি জানিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘তাহলেই দেখা যাবে কে কত টাকা নিয়েছে। পি কে হালদার এত টাকা নিল! নয় মিনিটের জন্য পি কে হালদারকে ধরতে পারেননি। তাহলে কেন নয় ঘণ্টা আগে ধরলেন না?’
বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, আমজনতার আমানতের টাকা থাকে ব্যাংকে। এ থেকে এমনভাবে টাকা নিয়ে যায় একশ্রেণির লোক, নেওয়ার সময়ই তারা জানেন যে টাকা ফেরত দিতে হবে না। বছরে এক লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে যায় বিদেশে। এগুলো যায় ওভারইনভয়েসিং ও আন্ডারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে কত যায় আল্লাহ মাবুদই জানেন।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে। আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হচ্ছেও। অনেকেই জেলে আছেন। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন তেমন নেই।’
“আগে সিমেন্টের নাম করে বালি আসত। একটার নাম কবরে আরেকটা আসত। আন্ডারইনভয়েসিং, ওভারইনভয়েসিং আগের মতো হয় না। একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলব না। পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না।”
অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সিল লাগানো নিম্নমানের বিটুমিন আসার তথ্য পেয়েছি। শর্ষের বীজের নামে এসেছে কফির বীজ। এ ছাড়া চীন থেকে এসেছে পাথরবোঝাই কনটেইনার। এ ধরনের আরও ঘটনা রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান।
প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী থাকার কথাও জানান তিনি। তবে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি।
সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার ‘বেগমপাড়া’র প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত ২২ নভেম্বর হাই কোর্ট অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চায়। তবে দুদকের দেওয়া জবাবে আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ