রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী শিল্পসমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মন্দিরের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মেয়র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বহাল রেখেছেন। তারা এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজনও করেছেন।
হিন্দু নেতাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিষ্ঠা ও নামকরণের সঙ্গে প্রায় আড়াইশ’ বছরের প্রাচীন ‘রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’-এর ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৭০০ সালের শেষের দিকে রাজা বিখন লাল ঠাকুর হিন্দুদের দেবতা নারায়ণের নামে এ মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মন্দির ও সংলগ্ন একটি পুকুর (জিউশ পুকুর) দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেই (আরএস) ব্রিটিশ পর্চায় উঠে এসেছে। শত শত বছর ধরে এই মন্দির ও পুকুরটির সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এ পুকুরটি দখলের জন্য মেয়র আইভীর পরিবার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, এ মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন রাজা বিখন লাল ঠাকুর। মন্দিরের পাশেই প্রায় পৌনে ৪ একর জমিতে একটি পুকুর খনন করেছিলেন তিনি, যা জিউশ পুকুর নামে পরিচিত। মন্দিরের মালিকানায়ই এটি সব সময় ছিল। তবে মেয়র আইভীর পরিবারের দাবি, এই সম্পত্তি তারা কিনেছেন এবং এটা ব্যক্তিগত জমি। মেয়র আইভী দাবি করেছেন, পরিবার সম্পৃক্ত থাকলেও এই জমির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই জমিকে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে হিন্দু ধর্মীয় নেতারা দাবি করেছেন, প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মন্দির ও জিউশ পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে (আরএস) ব্রিটিশ পর্চায় উঠে এসেছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের আমল থেকে মেয়র আইভীর পরিবার নকল দলিলের মাধ্যমে এ পুকুরটি দখলের পাঁয়তারা করে আসছে। যেসব নকল দলিল করে এ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে সেসব দলিলেই মেয়র আইভীর মা, দুই ভাই, মামা, খালাসহ তারই আত্মীয়স্বজনের নাম রয়েছে। সম্প্রতি মন্দিরের পক্ষে আদালতে মামলা করলে বাদীকে মেয়র আইভী ও তার লোকজন হুমকি দিচ্ছেন। স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা ও মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতারা।
মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছেন কয়েক হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রায় ১০০ কোটি টাকার এ দেবোত্তর সম্পত্তির দখল ঠেকাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ১১ নভেম্বর ২০২০, বুধবার দুপুরে স্মারকলিপি পেশ করার আগে শহরের প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেন তারা। কয়েক হাজার হিন্দু নারী-পুরুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন। দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নির্মল চ্যাটার্জী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, ‘৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার জানান, ভোটের সময় মেয়র আইভী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছের মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে ‘করজোরে নমস্কার’ করেন অথচ তার পরিবারই দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে আসছে।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য সেলিনা হায়াত আইভী রাজনৈতিক মহলে অনেকের কাছেই প্রশংসিত। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতিবাজ না হলেও পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে তার পদক্ষেপের ঘাটতি দেখা গেছে। এ দফায় মেয়র ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে এভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাস্তায় নেমে আসা ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার ঘটনাও নগরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হলে মেয়র নিজে এগিয়ে এসে দ্রুত এই অভিযোগের সুরাহা করতে হবে।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ