দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৮ এপ্রিল থেকে। সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে পর্যন্ত দেশে ৯৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৩২ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ হাজার ৪১৮ ডোজ টিকা নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাইরের কেন্দ্রগুলোতেই টিকা নষ্টের হার বেশি।
অবশ্য টিকা নষ্টের বিষয়টি যে কেবল বাংলাদেশেই ঘটেছে তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ টিকা নষ্ট করে দেশগুলো। কার্যক্রম পরিচালনার সময় টিকা নষ্ট হওয়া কমাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ থাকলেও বেশির ভাগ দেশই তাতে সফল হচ্ছে না। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নষ্ট হওয়া গ্রহণযোগ্য বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
সে হিসেবে বাংলাদেশের টিকা নষ্টের হার ১ শতাংশের কিছু কম। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ নামের টিকা দিয়ে দেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়। ইপিআইয়ের তথ্যমতে, কোভিশিল্ড টিকার দশমিক ৮৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে, যা প্রতিবেশী দেশ ভারতে টিকা নষ্টের হারের অন্তত ৫ ভাগ কম। ভারতে চলমান টিকা কার্যক্রমে কোভিশিল্ডের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে। সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকার আওতায়ই আনা যায়নি। এর মধ্যে অনেক রাজ্যে বন্ধ করা হয়েছে টিকা প্রয়োগ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ঝাড়খণ্ডে বরাদ্দের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ছত্তিশগড়ে ৩০ দশমিক ২, তামিলনাড়ুতে ১৫ দশমিক ৫, ১০ দশমিক ৮ ও মধ্যপ্রদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে।
পাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কমসংখ্যক টিকা নষ্ট হওয়াকে সাফল্য হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, টিকা কার্যক্রম চলাকালে কিছু টিকা স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পরিবহন, প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় কিছুটা দুর্বলতা থেকেই যায়। তার মধ্যেও সর্বোচ্চ কম অপচয় হওয়ার দিকটিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
ফাইজারের টিকা থেকে হৃদযন্ত্রে প্রদাহ
ফাইজারের করোনার টিকা নেওয়া অল্প সংখ্যক তরুণের হৃদযন্ত্রে প্রদাহ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। টিকা দেওয়ার সঙ্গে এই প্রদাহের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।-খবর রয়টার্সের
এই মার্কিন ওষুধ কোম্পানি বলছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বভাবত যতটা প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, মায়োকার্ডিটিস নামে পরিচিত এই প্রদাহের সংখ্যাটা তার চেয়ে খুব একটা বেশি না। হৃদযন্ত্রের পেশির প্রদাহকে বলা হয় মায়োকার্ডিটিস। উপসর্গের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসের হ্রস্বতা, বুকের ব্যথা, ব্যায়াম করার ক্ষমতা হ্রাস এবং অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন থাকতে পারে।
সমস্যার সময়সীমা ঘণ্টা থেকে মাস পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। বিস্তৃত কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে হৃদরোগের জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ৫০ লাখেরও বেশি টিকা পাওয়া মানুষের মধ্যে ২৭৫ জনের হৃদযন্ত্রের পেশির প্রদাহ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের তিনটি দলের সমীক্ষা অনুযায়ী, মায়োকার্ডিটিস নিয়ে কাউকে চার দিনের বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়নি। এছাড়া ৯৫ শতাংশকেই মৃদু আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সঙ্গে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক থাকার শঙ্কা আছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, বয়সের অন্যান্য কোটার চেয়ে ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণদের মাঝে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক বেশি পাওয়া গেছে।
এক বিবৃতিতে ফাইজার বলেছে, মায়োকার্ডিটিস নিয়ে ইসরায়েলের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে তারা অবগত আছে। এর সঙ্গে তাদের টিকার কোনো সম্পর্ক এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫০১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ