নাইজেরিয়ার একটি মাদরাসা থেকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে বন্দুকধরী জঙ্গিরা। দেশটির উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ নাইজারের তেজিনা শহরে রোববার (৩০ মে) এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সে দেশের স্কুলে ঘটে যাওয়া হামলাগুলোর মধ্যে এটা সর্বশেষ ঘটনা।
নাইজার প্রদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রবিবার তেজিনা শহরের একটি মাদরাসা থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বন্দুকধারী জঙ্গিরা।
নাইজার পুলিশের মুখপাত্র ওয়াসিউ আবিওদুন বলেছেন, তেজিনা শহরে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে এসে পৌঁছায়। সালিহু টাঙ্কো মাদ্রাসায় তারা গুলিবর্ষণ করে। সেখানকার একজন বাসিন্দা নিহত হন এবং আরও একজন আহত হন। এরপর বন্দুকধারীরা শিশুদের অপহরণ করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক কর্মকর্তা জানান, হামলাকারীরা প্রথমে শতাধিক শিশুকে অপহরণ করেছে। পরে বয়সে বেশি ছোট হওয়ায় কয়েকটি শিশুকে আবার ফেরত দিয়ে যায়। তাদের বয়স ৪ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি টুইটে জানিয়েছে, বয়সে বেশি ছোট এবং হাঁটতে পারে না—এ রকম ১১ শিশুকে মুক্ত করে দিয়েছে হামলাকারীরা। গভর্নর সানি বেলো ওই শিশুদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববারের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দিস ডে নামে একটি খবরের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, অস্ত্রধারীরা মোটরসাইকেলে করে পুরো শহর চষে বেড়ায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। মানুষজন তাদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়ার পর তারা মাদরাসায় ঢুকে শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে। মাদ্রাসাটিতে ছয় বছর থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ও ছেলে শিশুরা একসঙ্গে পড়তো।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং এতে একজন মারা গেছেন। এছাড়া গাড়িতে করে ঘুরছিলেন এমন বেশ কিছু মানুষকেও অপহরণ করেছে বন্দুকধারীরা।
নাইজেরিয়ায় অবস্থানরত বিবিসির প্রতিবেদক মায়েনি জোনস বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে মুক্তিপণের জন্য অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তেজিনায় এই হামলা এমন দিনে ঘটলো যার আগের দিন প্রতিবেশী কাদুনা প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ছয় সপ্তাহ আগে অপহৃত হওয়া ১৪ জন শিক্ষার্থীর মুক্তির ঠিক একদিন পরেই এই অপহরণের ঘটনাটি ঘটল৷ হামলাকারীরা ২০ এপ্রিল কদুনার গ্রিনফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপহরণ করেছিল, ওই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মী নিহত হন৷ হামলাকারীরা ২০ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছিল৷ হামলার পরপরই মুক্তিপণ দাবি আদায়ের জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়৷ কাদুনা রাজ্য সরকার অপহরণকারীদের মা-বাবাকে মুক্তিপণ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল৷
তেজিনা কাগারা শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সেখানেও গত ফেব্রুয়ারিতে ২৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে নাইজেরিয়ার জামফারা প্রদেশের জাঙ্গেবে এলাকার একটি আবাসিক স্কুল থেকে প্রায় ৩০০ ছাত্রীকে অপহরণ করেছিল অস্ত্রধারীরা। তাদের বেশিরভাগকেই অবশ্য পরে মুক্তি দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশে শিক্ষার্থীদের বারবার অপহরণ করা হচ্ছে৷ ২০১৪ সালে বোকো হারামে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীর নিখোঁজ হওয়া সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা৷
২০১৪ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চিবক শহরে জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণের পর বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তবে সাম্প্রতিক হামলাগুলো সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জঙ্গিদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার একটি ইসলামপন্থী রাষ্ট্রের পক্ষে লড়াই করে আসছে৷ আবারও অপহরণের ঘটনায় নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে৷ লাগোসের আর্চবিশপ ৬১ বছর বয়সী আলফ্রেড অ্যাডেওয়াল মার্টিনস, বর্তমান পরিস্থিতিতে নাইজেরিয়ার সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশকে নৈরাজ্যের হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ৷ সারা দেশে অপহরণসহ সব ধরনের সহিংসতা বাড়ায় তিনি উদ্বিগ্ন ৷ তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি সর্বস্তরে ব্যর্থ হয়েছে৷
সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গীর্জা এবং মসজিদ এবং নাগরিক সমাজকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ