টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে কোভিড-১৯ মহামারি। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে কার্যত সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত। বিশ্বের মোটামুটি সকল দেশেই টিকাদান কর্মসূচি চললেও কবে নাগাদ এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে বিশ্ব, এর নির্দিষ্ট তথ্য যেন কারও হাতেই নেই। অবশ্য চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কোনো সমাপ্তি দেখা না গেলেও ভবিষ্যতে কোভিড-২৬ এবং কোভিড-৩২ মহামারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা।
টেক্সাস চিলড্রেন হসপিটাল সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের সহকারি ডিরেক্টর পিটার হোটেজ় বলেন, কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা জানতে না পারা সমগ্র বিশ্বকে ভবিষ্যতে আরও বড় কোনও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মুখেই ঠেলে দিচ্ছে। যদি আমরা কোভিড-১৯-র উৎপত্তি সম্পর্কে না জানতে পারি, তবে এরপর কোভিড-২৬ বা কোভিড-৩২ হওয়াও অসম্ভব নয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএও) কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন স্কট গটলিয়েব। বর্তমানে তিনি দেশটির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজারের বোর্ডের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেছেন, চীনের উহান শহরে অবস্থিত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে থাকতে পারে এই ভাইরাস। এই দাবি নাকচ করার মতো কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি বেইজিং। এটা উদ্বেগজনক।
এছাড়া ৯০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করতে গত বুধবার মার্কিন গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
করোনায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে ‘‘চীনা ভাইরাস’’ হিসেবে অভিহিত করেন।
যদিও, চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাসের উত্স নির্দিষ্ট কোনও একটা জায়গা নয়। একাধিক উত্স থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনায় মৃত্যু ছাড়াল ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার
চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে আরও কমেছে ভাইরাসে নতুন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা। একইসঙ্গে কমেছে দৈনিক মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮৬ হাজার।
এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৭ কোটি ১০ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৬ লাখ ৯ হাজার ৫৪৪ জন মারা গেছেন। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ১২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৯২ জনের।
অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে মোট আক্রান্ত দুই কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ১২৭ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ